- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

নীতিমালা সম্পর্কে জানে না ল্যাব-ক্লিনিক মালিকরা!

08

নিউজ ডেক্স : জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বন্ধে নানা ‘অজুহাত’ দেখিয়ে বাধ সেধেছে নগরীর ল্যাব-ক্লিনিকদের সংগঠন ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির নেতারা জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন, ল্যাব-ক্লিনিকের অধিকাংশ মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা সম্পর্কে বুঝেন না, জানেন না। ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে রেহাই পেতে কী কী নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে জেলা প্রশাসনের কাছে তা জানতে চেয়েছেন তারা।

অথচ ল্যাব-ক্লিনিকের অনুমোদনের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালা সম্পর্কে ল্যাব-ক্লিনিকের মালিকরা অবগত থাকেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ল্যাব-ক্লিনিক পরিচালনা করে আসার পর এখন প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা বলছেন, তারা নীতিমালা সম্পর্কে অবগত নয়।

ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এমন অদ্ভূত কথায় সায় দিয়ে জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী তাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সকল নীতিমালা মেনে সংশোধন হতে একমাস সময় দিয়েছেন। আর এ কারণেই গত একমাস ধরে নগরীর বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক-হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বন্ধ রেখেছে জেলা প্রশাসন।

গত ১৮ অক্টোবর নগরীর জিইসি মোড়ে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার কার্যালয়ে ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সাথে বৈঠকে বসেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসময় সেখানে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ও বিএমএ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর সপ্তাহ খানেক আগে ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজন নেতা গিয়ে জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমানের সাথে সাক্ষাত করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানান। এরপর ১৮ অক্টোবর জেলা প্রশাসন তাদের সাথে বৈঠকে বসেন।

এ বৈঠকে ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। তারা বলেছেন, মোবাইল কোর্ট যেসব অনিয়মের কারণে জরিমানা করছে সে সম্পর্কে তারা অবগত নয়।

জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা মোবাইল কোর্টের অভিযান নিয়ে আমার কাছে আপত্তি করেছেন। আপত্তির কথা শুনতে তাদের সাথে আমরা বৈঠকে বসি। তারা নাকি অনেক কিছু বুঝেন না। তারা এসব অনিয়ম সংশোধন করতে চান। নীতিমালা মেনে চলার বিষয়ে তারা কমিটমেন্ট দিয়েছেন। আমরা তাদের সংশোধন হতে এক মাস সময় দিয়েছি। এসময়ের মধ্যে সংশোধন না হলে আমরা আবার মাঠে নামবো।’

জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে অংশ নেওয়া ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. ম কাশেমের কাছে গতকাল এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রসঙ্গে স্ববিরোধী মন্তব্য করেন। প্রথমে তিনি বলেন, ‘ল্যাব-ক্লিনিকের নীতিমালার বিষয়ে আমরা অনেক কিছু জানি না, বুঝিও না। যেসব নীতিমালা আছে তা মেনে আমরা সংশোধন হতে চাই। সেকারণে জেলা প্রশাসনের কাছে সংশোধনের জন্য আমরা সময় চেয়েছি।’

এরপর তিনি বললেন, ‘যেসব ক্লিনিক-ল্যাবে অনিয়ম চলছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সমিতির করার কিছু নেই। যারা তাদের অনুমোদন দিয়েছে তারা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

জেলা প্রশাসনের এক মাস সংশোধনের সময় প্রসঙ্গে ডা. ম কাশেম বলেন, ‘দুই, তিন, ছয় মাসে তো সংশোধন হওয়া যায় না। সংশোধন হতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে আগামী ১৮ কিংবা ২০ নভেম্বর আরেকটি বৈঠকে বসবো।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী এ বিষয়ে  বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘ক্লিনিক-ল্যাবের মালিকরা সভায় বলেছেন, তারা নীতিমালা সম্পর্কে অনেক কিছু বুঝে না, জানে না। নিয়ম-নীতি সম্পর্কে জেনে তারা সংশোধন হতে সময় চেয়েছেন। জেলা প্রশাসন তাদের ১ মাস সময় দিয়েছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘ল্যাব-ক্লিনিকের অনুমোদনের জন্য যখন তারা আবেদন পত্র নিয়েছিলেন তাতে তো নীতিমালার কথা লিখাই ছিল। কাজেই এসব নীতিমালা তো তাদের না জানার কথা নয়।’

জানা গেছে, ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে নগরীতে ২৬০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

নগরীতে ক্লিনিক-হাসপাতালে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সর্বশেষ অভিযান হয় গত ৪ অক্টোবর। এদিন নগরীর একটি ক্লিনিক ও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। চট্টেশ্বরী রোডের বেসরকারি কসমোপলিটন হসপিটালে অভিযানে ক্লিনিকটির অপারেশন থিয়েটারে পাওয়া যায় নিষিদ্ধ ইনজেকশন। ওই দিন হালিশহর এলাকার হিউমান প্যাথোলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালিয়ে গুরুতর অনিয়ম খুঁজে পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেয়াদোত্তীর্ণ রিএজেন্ট উদ্ধার করা হয়। এ অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এরআগে ২৬ সেপ্টেম্বর নগরীর জিইসি মোড়ে ‘মেডিক্যাল সেন্টার’ হাসপাতালে আরেকটি অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। অভিযানে হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটারে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন পাওয়া যায়। এছাড়া তাদের প্যাথলজিতে পাওয়া যায় মেয়াদোত্তীর্ণ রিঅ্যাজেন্ট। এসব অনিয়মের কারণে এই প্রতিষ্ঠানটিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। -সুপ্রভাত