- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

দক্ষিণ চট্টগ্রামে সিএনজি চালক মালিকরা চরম ভোগান্তিতে

full_559955139_1446350665

নিউজ ডেক্স : সিএনজি (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস), পেট্রোল ও অকটেনের অভাবে জ্বালানি সংকটে পড়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজার হাজার সিএনজি অটোরিকশা (ত্রি–হুইলার)। আর এতেই বেকার হতে বসেছেন পাঁচ সহস্রাধিক অটোরিকশা চালক। সেই সাথে আর্থিক অভাব–অনটনের শিকার হচ্ছে তাদের পরিবারও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মহাসড়কগুলোতে সিএনজি অটোরিকশাসহ যাবতীয় ত্রি–হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকেই সিএনজি টেক্সি চালকরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু থেকে লোহাগাড়া উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের আওতার বাইরে আঞ্চলিক সড়কগুলোর কোথাও কোনো পেট্রোল পাম্প বা সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন নেই। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় চলাচলরত অটোরিকশাগুলোকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে মাহাসড়কের উপর দিয়েই রিফুয়েলিং স্টেশনে যেতে হয়। মহাসড়কে না উঠে এসব অটোরিকশা কোনো ভাবেই কোনো ধরণের জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারে না। সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কের উপর দিয়ে সিএনজি অটোরিকশা চলাচলে পুলিশের কড়াকড়ির কারণে তারা জ্বালানি সংগ্রহে যেতে না পারায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অটোরিকশার চালক এবং মালিকরা।

অটোরিকশা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এবং সরেজমিন অনুসন্ধান করে জানা গেছে, সরকার ২০১৫ সালের আগস্টে যখন দেশের সবগুলো মহাসড়কে থ্রি–হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তখন বলা হয়েছিল, এসব যানবাহন নির্ধারিত জ্বালানি সংগ্রহে দুইঘণ্টা যাত্রীবিহীন অবস্থায় মহাসড়কে চলাচল করতে পারবে। কিন্তু ধীরে ধীরে তা সংকুচিত হতে থাকে। যা বর্তমানে প্রায় শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছে। চালক–মালিকরা জানান, এখন জ্বালানি সংগ্রহে সিএনজি অটোরিকশা মহাসড়কে উঠলেই আটক করে থানায় নিয়ে মামলা দিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনী। এতে তারা জ্বালানি সংকটে গাড়ি চালাতে পারছেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু থেকে কক্সবাজারের দিকে লোহাগাড়া উপজেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার মহাসড়ক এলাকা ছাড়া এ মহাসড়কের সাথে লাগোয়া আঞ্চলিক সড়কগুলোতে কোথাও পেট্রোল পাম্প বা সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন নেই। ফলে এ মহাসড়ক সংলগ্ন আঞ্চলিক সড়কগুলোতে চলাচলকারী কয়েকহাজার সিএনজি অটোরিকশার চালকদের জ্বালানি সংগ্রহে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জ্বালানি সংগ্রহ করতে না পেরে অটোরিকশা চালানো বন্ধ করে দিয়ে ইতোমধ্যে অনেক অটোরিকশা চালক অন্যান্য পেশায় ফিরে গেছেন। চালকরা এভাবে অটোরিকশা চালানো বন্ধ করে দেয়ায় এসব যানবাহনের মালিকরাও পড়েছেন চরম বেকায়দায়। ব্যাংক লোন বা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লোনের টাকায় কেনা তাদের এই অটোরিকশাগুলো বন্ধ বা বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। কোনো কোনো মালিক নিজের অটোরিকশা বিক্রির ঘোষণা দিলেও এখনো কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা। অথবা কেউ কেনার আগ্রহ নিয়ে আসলেও খুব কম মূল্যই দিতে চাচ্ছেন।

তারা বলছেন, ক্রয় মূল্যের অর্ধেকেরও বেশী টাকা লোকসান দিয়ে অটোরিকশা বিক্রি করলে তারা ব্যাংক লোন বা ধারদেনা কিভাবে শোধ করবেন? যে কারণে তারা অটোরিকশা ভাড়াও দিতে পারছেন না, আবার বিক্রিও করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে তারা পড়েছেন দোটানায়। সিএনজি অটোরিকশা চালানোর সাথে জড়িত মোহাম্মদ শফি, আবদুল গাফফার, ফযেজ আহমদ, নুরুল আলম, নুরুচ্ছাফা, আজগর আলী, রমজান আলী, মোহাম্মদ মোরশেদ, কামাল উদ্দীন, আহমদ কবির ও শ্রীমান বিশ্বাস সুমনসহ অনেকেই তাদের দুর্ভোগের বিষয়টি তুলে ধরে জানতে চান, যদি জ্বালানিই সংগ্রহ করতে না পারেন তাহলে আমরা কোথায় যাবো? এখন আয় ইনকাম করতে না পারার কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশিরভাগ অটোরিকশা চালক অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলেও জানান তারা। এসব চালকরা জানান, তারা তাদের পেশা হিসাবে অটোরিকশা চালনোকেই বেছে নিয়েছিলেন এবং এ পেশায় ভালোই চলছিল তাদের। কিন্তু এখন সবদিকেই অন্ধকার। কারণ তারা অটো চালকের কাজ ছাড়া আর কিছুই শেখেননি। ফলে জ্বালানি সংকটে অটোরিকশা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়ায় এখন দিনমজুরি করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো গত্যন্তর নেই।

মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিকল্প পদ্ধতিতে ভ্রাম্যমাণ অকটেন, পেট্রোল, গ্যাস (সিএনজি) বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়ার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, এটি করা গেলে জ্বালানি সংকটের কারণে অটোরিকশা নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার আপাতত কিছুটা সমাধান হতে পারে। একইসাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা সহজলভ্য উপায়ে জ্বালানি সংগ্রহ করে মহসড়কে থ্রি–হুইলার চলাচলের নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে মেনে যাতে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে অটোরিকশা চালাতে পারেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট একটি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান। –আজাদী