নিউজ ডেক্স : রাঙ্গুনিয়ার ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (৪০), মোহাম্মদ জাহিদুল আলম (৪২) এবং আক্তার হোসেন (৪৫)। তিনজনই ওমানের রাজধানী মাস্কাট মডার্ন রোজ ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ এলএলসি নামক একটি কোম্পানির পর্দার সেকশনে চাকরি করতেন। কথা ছিল লকডাউন শেষে তিনজন একসাথে বাড়ি ফিরবেন কিন্তু লকডাউনের মধ্যেই তারা একসাথে দেশে ফিরে এসেছেন। তবে জীবিত নয় নিথর দেহে। একসাথে লাশ হয়েই দেশে ফিরলেন তারা।
জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল ওমানের স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সালালাহ থেকে মাস্কাটগামী একটি প্রাইভেট কার সড়কের আল তামরিত নামক স্থানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন তারা।
তাদের কোম্পানির অন্যতম পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, “এই তিনজনের লকডাউন শেষে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তবে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা তাদের জীবিত ফিরতে দেয়নি।”
তিনি বলেন, “আজ শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) বিকাল ৫টার দিকে তাদের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা থেকে রাঙ্গুনিয়া আসে। এর আগে ওমান থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল ৭টার দিকে তাদের বহনকারী বিমানটি অবতরণ করে। একই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে পশ্চিম সরফভাটায় সালাউদ্দিন এবং বেতাগী বালুরচর এলাকায় আক্তার হোসেন এবং পৌনে ৮টার দিকে পোমরা মাইজপাড়ায় মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের পৃথক পৃথক জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়।”
নিহত মোহাম্মদ সালাউদ্দিন পশ্চিম সরফভাটা সূচিয়া পাড়া এলাকার ফয়েজ আহাম্মদের ছেলে। তার বড় ভাই মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমার ছোট ভাই ৩ বছর আগে ওমান গিয়েছিল। এবার লকডাউন শেষ হলে দেশে আসবে বলে জানিয়েছিল কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ছোট ভাইয়ের প্রাণ কেড়ে নিল। পরিবারে ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে সে মেঝ সন্তান। তার স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে।”
নিহত মোহাম্মদ জাহিদুল আলম পোমরা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকার মৃত আবদুল মুবিনের ছেলে। তার ভাগিনা ইফতেখার আহাম্মদ জিসান বলেন, “গত ৬ বছর ধরে তিনি ওমানে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছিলেন। সর্বশেষ ১২ মাস আগে দেশে ছুটিতে এসেছিলেন। তার পরিবারে মা, বাবা, স্ত্রী, ৯ ও ১৭ বছর বয়সী দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। তিনিও লকডাউন শেষে দেশে আসার কথা বলেছিলেন কিন্তু মৃত্যু তাকে আর জীবিত আসতে দেয়নি।”
অন্যদিকে নিহত আক্তার হোসেন বেতাগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড গুনগুনিয়া বেতাগী বালুরচর এলাকার মরহুম ইসহাক মিয়ার ছেলে। তার ছোট ভাই মো. ইব্রাহীম বলেন, “পরিবারে তার ৩ মেয়ে সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে ২ মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন। ১৬/১৭ বছর ধরে ওমানে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছিলেন তিনি।”
জানা যায়, আজ শুক্রবার বিকালে তাদের লাশ এলাকায় এলে এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়। প্রত্যেকের বাড়ির উঠান-ঘরে মানুষের ভিড়। শোকে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছেন পরিবারের স্বজনরা। সবার চোখেমুখে শোকের ছায়া। দূরের ও কাছের আত্মীয়রাও এসে কাঁদছেন। কেউ বিলাপ করছেন। শোকে মুহ্যমান পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন স্থানীয়রা। তাদের মৃত্যুতে এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। আর পরিবারে পরিবারে বইছে কান্নার রোল।
নিহতদের কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, “তারা মাস্কাট থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে সালালাহ নামক অপর এক সিটিতে পর্দার কাজ করতে এক সপ্তাহ পূর্বে গিয়েছিলেন। কাজ শেষ করে প্রাইভেট কারে করে মাস্কাটে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।” আজাদী অনলাইন