নিউজ ডেক্স : সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের দুজন প্রভাবশালী সিনিয়র মন্ত্রী-নেতা একরাম নিহতের পর ফোন করে বলেছিলেন “ভুল হয়েছে”। সাংবাদিকদের সাথে আর কথা বলবেন না। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আপনাকে দেখা করিয়ে দেব। প্রধানমন্ত্রীকে সব কথা খুলে বলবেন। তাহলে আজ একবছর পার হয়ে গেল। কেন প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডাকলেন না। একরামতো প্রধানমন্ত্রীকে মা হিসাবে জানতেন। তাহলে মা হয়ে কেন উনি সন্তানের খবর নিলেন না। আমাদের খবর নিলেন না। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই দাবী। একরাম হত্যার বিচার চাই, আজীবন বিচার চেয়ে যাব। আর কোন চাওয়া নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিচারটা করে দিন। তিনি বলেন এখনো আশায় আছি প্রধানমন্ত্রী কবে ডাকবেন।
টেকনাফে একবছর আগে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত একরাম কাউন্সিলরের স্ত্রী আয়েশা খাতুন আবেগাপ্লুত কন্ঠে কথা গুলো বলছিলেন। বলেন দায়িত্বশীল মন্ত্রী-নেতাদের নাম উল্লেখ করে বলেন তাদের কথামতো মোবাইল বন্ধ রেখেছিলেন। সাংবাদিকদের সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
আয়েশা আরো জানান, কষ্ট হয় প্রতিটা মুহুর্ত। মেয়েরা এখনো তাদের বাবার পরিধেয় আধোয়া কাপড় ধুতে দেয়নি। সেই কাপড় থেকে বাবাকে অনুভব করার চেষ্টা করেন। টেকনাফ বর্ডার গার্ড স্কুলে ৯ম ও ৭ম শ্রেনীতে পড়ছে তারা। মেয়েদের পড়ার সুবাধে একরাম সেই স্কুলের পরিচালনা কমিটিরও সদস্য ছিলেন। বর্তমানে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই মেয়ের পড়ালেখা অবৈতনিক করে দিয়েছেন বলে জানালেন। একরামের শূন্য পদে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন ছোট ভাই এহেতেশামুল হক। তিনি কাউন্সিলরের মাসিক ভাতার টাকা একরাম পরিবারকে দিয়ে দেন। তা দিয়ে এবং আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় কোন রকমে দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চলছে বলে জানান।
প্রসঙ্গত গতবছরের ২৬ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন পৌরসভার ৩বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ১৩বছর ধরে উপজেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা একরামুল হক। এর কয়েকদিন পর একরামের স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে একরামের শেষ কথোপথন ও বন্দুকযুদ্ধের সময়কার একটি অডিও রেকর্ড সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরলে গোঠা দেশ তোলপাড় হয়। সেই অডিও রেকর্ডের তার মেয়ের কন্ঠের বাবাকে বলা “আব্বু তুমি কান্না করতেছ যে” এখনও দেশবাসীর কানে বাজে। একরামের স্ত্রী দাবী করেছিলেন মাদকবিরোধী অভিযানের নামে পরিকল্পিতভাবে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার একবছর পরও তিনি সেই দাবী জানিয়ে বলেন কোন একটি পক্ষের ইন্ধনে পরিকল্পিত ও নাটকীয়ভাবে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। খুব জানতে ইচ্ছে করে কারা তার স্বামীকে হত্যা করলো। কি কারণে হত্যা করলো।
অবশ্য র্যাবের লিগ্যাল এবং মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সে সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, একরাম যে মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তার যথেষ্ট প্রমাণ গণমাধ্যমের খবরগুলোতেই রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা, তাতেও তার নাম রয়েছে।”
একরামের স্ত্রীর প্রশ্ন প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হলো, আর আমার নিরীহ স্বামীকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হলো কেন।
একরামের মা’র আকুতি : একরামের মা ষাটোর্ধ হাফেজা খাতুন বলেন, একরামের দুই মেয়ের কষ্ট সহ্য হয়না। একরামের স্ত্রী কিইবা বয়স হয়েছে তার। অথচ এই বয়সে তাকে বিধবা করা হলো। কার কারণে মেয়েদুটো তাদের পিতাকে হারালো। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, সারাক্ষন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন সন্তানের হত্যার যেন বিচার হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের যাতে একই পরিণতি ভোগ করতে হয় আল্লাহর কাছে তা কামনা করেন। একরাম হত্যার পেছনে কার হাত রয়েছে তা তিনি অনুমান করতে পেরেছেন বলে জানান।
একটি চশমা : ঘটনার কয়েকদিন পর একরামের ব্যবহারের চশমাটি দিয়ে যান এক লোক। যিনি চশমাটি কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাস্থলে পেয়েছিলেন। রক্তমাখা সেই চশমাটিই তাদের শেষ স্মৃতি। তবে ফিরে পাননি একরামের ব্যবহৃত মোবাইল দুটো। একরামের ব্যবহৃত শখের মোটর সাইকেলটিও মামলার আলামত হিসাবে থানায় জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানতে পারলেও তা উদ্ধার করতে পারেননি।
সূত্র : টেকনাফটুডে