ফিরোজা সামাদ : আমার বাসার কাজের বুয়া, বয়স ২৮/২৯ বছর। এই বয়সে এ টাইপ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত । এটা জেনেই সমস্ত চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে কাজে নিযুক্ত করলাম । বেতন ওর চাহিদা অনুযায়ী স্বীকার করলাম । দুই মাস পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে । আমরা গল্প করছিলাম। দেখলাম ও শুয়ে পড়ে বলল খালাম্মা আমাকে ধরেন । সবাই মিলে ধরাধরি করে খাটে শুইয়ে দিলাম । শুরু হলো খিচুনি (এই সমস্যাটা ওর আগেই ছিল, কিন্তু আমাদের বিষয়টি জানায়নি,ওর সুস্হতার পরে শুনেছি)। প্রথমে প্রতিবেশিদের সহায়তায় গরম স্যাক দিলাম, ম্যাসাজ করলাম, রাত তখন ১২ টা, অতঃপর গাড়িতে করে নিয়ে গেলাম বনানীর অভিজাত হসপিটাল প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট- এ ।
তারা রোগী না দেখে জিজ্ঞেস করছিলো, কাজের বুয়া ? মারধর করা হয়েছে কিনা ? রোগীকে জিজ্ঞেস করছিল কে মেরেছে? কি দিয়ে মেরেছে?কোথায় অাঘাত করেছে ইত্যাদি । অথচ, কোনো চিকিৎসা দিলোনা, বললো,ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। ওখান থেকে নিয়ে গেলাম মহাখালী আয়শা মেমোরিয়াল হাসপাতালে । সেখানেও একই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হলো । যখন ধমক দিলাম রোগীর কিছু হলে অাপনাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্হা নিবো। তারপরে দেখলাম ভর্তি করিয়ে নিলো । বিভিন্ন ফলোয়াপ, অকারণে প্যাথলজি টেষ্ট করিয়ে স্যালাইন, ঔষধ দিয়ে পরদিন বেলা ১২’০০ টায় হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয় । ২৪ ঘন্টা মনিটরিং এ রেখে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিল দেয়া হলো ১৪,৮০০ টাকা । এ ঘটনাটি দু’বছর পূর্বের।

আবার কয়েকদিন অাগে আমার সাহেবের সেক্রেটারি (অামার দেয়া পদবী) ছেলেটির জ্বর হয় । স্বাভাবিক ভাবেই ওর ঔষধ পত্রের ব্যবস্থা করা হয় । অামার ফ্ল্যাটের সামনের ফ্ল্যাটে একজন ডাক্তার থাকেন তার পরামর্শ নেয়া হয় । ২ দিন পর জ্বর ভালো হয়ে যায়, কিন্তু আবার ২দিন পর জ্বর হয়। বয়স ১২/১৩ বছর । ও আমার সাহেবের সাথে মসজিদে যায়,এটা ওটা এগিয়ে দেয় ।ভাবলাম ডেঙ্গু হলো কিনা ? ডাক্তারের পরামর্শে কেয়ারটেকার ও ড্রাইভারের সাহায্যে ভর্ত্তি করতে পাঠালাম গুলশান শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওখানে যাওয়ার সাথে সাথে সকলের একই প্রশ্ন ওকে মারধর করা হয়েছে কিনা ? পেটে লাথি মারা হয়েছে কিনা ? গলা চেপে ধরা হয়েছে কি না? কোয়াটার, ড্রাইভার যতোই বলে না ওর জ্বর, ততোই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে দেখে ওখানে উপস্থিত একজন ভদ্রলোক ( যিনি আমাদের জানেন ) নাকি বলেছেন যে, অামি তাদের চিনি, জানি তারা দুজন বয়স্ক মানুষ। বরং ও তাদেরকে মেরে আসতে পারে, তারা কখনো মারতে পারে না । যাহোক, আবার ১২ ,৩০০/ টাকা বিল মিটিয়ে ওকে সুস্থ অবস্থায় বাসায় আনা হলো ।
বন্ধুগন বিষয়টি হয়তো অনেক বড় হয়ে গেছে । লিখছি এই জন্য যে, বেশ কয়েক দিন আগে বাসায় কাজের লোকদের সাথে মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্বলিত এক বন্ধু একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা অথবা কোন চিকিৎসা না করানোর বিষয়টি উল্লেখ ছিল । এখন বন্ধুগন আপনারাই বলুন, কোন কাজের বুয়া বা ভৃত্যের হঠাৎ কোনো অসুস্থতা বা দূর্ঘটনা (হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু) ঘটলে মালিক বেচারার কি অবস্থা হবে ? খুনের দায়ে তার নির্ঘাত গারদ ছাড়া কোনো উপায় অাছে কি ?
মানবতা কিভাবে প্রদর্শন করা উচিত গৃহ কর্মীর প্রতি তাই নিয়েও মহা সংশয়। তবে মানবতার যে অবক্ষয় হচ্ছে তাও ঠিক। বেশ কিছু অমানুষ অবশ্যই অাছে যারা অমানবিক ও হিংস্র অাচরণ করে থাকে, যা অামরা দৈনিককাগজ ও টেলিভিশনের খবরে জানতে পারি দেখতে পাই । কিছুতেই এই দুরাচরণ, অমানবিকতা ও হিংস্রতা কাম্য নয়।
জয় হোক মানবতার,জয় হোক ভালোবাসা ও সহমর্মিতার !!
(লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লেখা)