- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

জো বাইডেনের জীবন কাহিনি

সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি বিক্রি করতেন বাইডেনের বাবা

ডেমোক্র্যাট দলের মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। তার পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায়। তার পরিবার ছিল ক্যাথলিক ধর্মচর্চায় প্রচন্ড আগ্রহী। বাইডেনের জন্মের আগে তার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলেও পরে দরিদ্রতার মুখে পড়েন। কোনো ভালো কাজ না পাওয়ায় বাইডেন পরিবার অর্থকষ্টে পড়ে। ডেলাওয়ারের উইলিংমটনে নতুন বাসায় ওঠেন তারা। এরপর বাইডেনের বাবা একসময় সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি বিক্রির দোকানে কাজ শুরু করেন। মধ্যবিত্তের আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যেই বড় হন বাইডেন। স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। ষাটের দশকের শেষ দিকে ডেমোক্র্যাট দলের রাজনীতির সমর্থন দিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার  শুরু জো বাইডেনের।

তোতলাতেন বলে স্কুলে তাকে নিয়ে হাসত সবাই

পুরো বিশ্ব মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি কৌশলের ওপর চোখ রাখে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলেন তা সংবাদ শিরোনাম হয়ে দাঁড়ায়। জো বাইডেনের কথাও সবাই শুনবে। কিন্তু ছেলেবেলায় কথা বলতে গেলেই তোতলাতেন বাইডেন। স্কুলে সহপাঠীরা তাকে নিয়ে খুব মজা করত। যাদের সঙ্গে খেলতে যেতেন তারাও তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। তোতলামি কাটাতে কবিতা আবৃত্তি শুরু করেন বাইডেন। এক সময় তোতলামি কমে যায়। দরিদ্রতার কারণে শৈশবে নানা-নানীর বাসায় চলে যেতে হয় তাকে। স্কুলে খেলাধুলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলিও ছোটবেলা থেকেই ছিল তার। হাইস্কুল পর্যায়েও ‘ক্লাস লিডার’ ছিলেন বাইডেন। বিশ্ববিদ্যালয়েও ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। সেই বাইডেনই ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক  ওবামার হাত থেকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’ অর্জন করেন।

ছিলেন মেধাবী ছাত্র, পড়লেন প্রেমে

বাবার আর্থিক কষ্টের জন্য নানা-নানীর বাসায় বেশ কয়েক বছর ছিলেন বাইডেন। পরে ডেলওয়ারের ক্লেমন্ট থেকে উইলিংমটনে এসে স্কুল, হাইস্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যান।

ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়ারে উচ্চশিক্ষার জন্য যান তিনি। ১৯৬৫ সালে সেখান থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি শেষ করেন। সে সময় তার ডাবল মেজর ছিল হিস্টোরি ও পলিটিক্যাল সায়েন্স। এ ছাড়া মাইনর ছিল ইংরেজি। পড়াশোনায় যে বাইডেনের মেধার জোর ছিল সেটা স্পষ্ট। প্রথম বর্ষের বসন্তের ছুটি কাটিয়ে বাহামাস থেকে ফেরার পথে পরিচিত হন সিরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নিলিয়া হান্টারের সঙ্গে। প্রথম দর্শনেই প্রেম। আর ভালোবাসার টানেই একপর্যায়ে সব ছেড়ে পড়াশোনায় ব্যাপক মনোযোগী হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৬৫ সালে ডেলাওয়ার থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই বাইডেন ছুটে যান সিরাকাউস বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এর মাঝে সেরে নেন বিয়ের পর্বটাও। ১৯৬৬ সালেই নিলিয়া হান্টারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন জো বাইডেন। ১৯৬৮ সালে সিরাকাউস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করেন।  ক্লাসে ৭৬তম হয়েছিলেন বাইডেন।

যেভাবে শুরু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

রাজনীতির প্রতি বাইডেনের আগ্রহ ১৯৬১ সালের নির্বাচনের পর থেকেই। তবে নিজে রাজনীতিতে জড়ান আরও পড়ে। তত দিনে আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গোছাতে শুরু করেছেন বাইডেন। ডেলওয়ারের উইলমিংটনে একটি ল’ ফার্মে কাজ করেন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই রাজনীতি নিয়ে সরব হন তিনি। রিপাবলিকান নেতার ল’ ফার্মে কাজ করলেও তিনি রিপাবলিকানদের রাজনীতির আদর্শকে সমর্থন করতেন না। সে সময়ে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রিচার্ড নিক্সনকে সমর্থন করতেন না বলে নিজেকে স্বতন্ত্র আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ১৯৬৯ সালে এক ডেমোক্র্যাট নেতার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে যান তিনি। এর জেরেই ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিজেকে রেজিস্টার্ড করান। শুরু হয় ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন। অল্প সময়েই রাজনীতির মঞ্চে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন তিনি। পরের বছরই নিউক্যাসেল সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন বাইডেন। কাউন্সিলম্যান হওয়ার পরপরই ১৯৭১ সালে নিজের ব্যক্তিগত ল’ ফার্মও স্থাপন করেন তিনি। তার জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা চোখে পড়ে ডেমোক্র্যাট নেতাদের। পরের বছর ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মাত্র ২৯ বছর বয়সেই বাউডেনকে মুখোমুখি করান রিপাবলিকান অধ্যুষিত এলাকায় সিনেট নির্বাচনে। বাউডেনের প্রতিপক্ষ ছিলেন সে সময়ের জনপ্রিয় সিনেটর রিপাবলিকান ক্যালেব বোগস। বাইডেনের বোন ভ্যালেরি বাইডেন ছিলেন ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। এ ছাড়া তার বাবা-মা দুজনেই বাইডেনের হয়ে প্রতিদিন প্রচারণায় ছিলেন। বাইডেনের জনপ্রিয়তা থাকলেও কেউ আশা করেনি রিপাবলিকান নেতা ক্যালেব বোগসকে তিনি হারাতে পারবেন। কিন্তু নভেম্বরেই অঘটনের জন্ম দেন বাইডেন। ক্যালেবকে হারিয়ে ডেলওয়ারের সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি। মার্কিন ইতিহাসে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ  সিনেটর হন বাইডেন।

অর্থকষ্টের চিন্তায় কাটত দিন

পরিবারের আর্থিক কষ্ট ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন বাইডেন। আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকে সে কষ্ট কিছুটা কমলেও পারিবারিক ট্র্যাজেডি তাকে বারবার আঘাত করেছে। ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন তার ছেলে বো বাইডেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জানা যায় তার ক্যান্সার। মে মাসে তার ছেলে মারা যান। সে সময় জো বাইডেন ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে সপ্তাহের এক মধ্যাহ্নভোজের আলাপচারিতায় ওবামাকে বলেন, তিনি অর্থকষ্টের চিন্তায় আছেন। ছেলের উপার্জন ছাড়া ছেলের পরিবারের দেখভাল নিয়ে তিনি কিছুটা উদ্বিগ্ন। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে তিনি ও তার স্ত্রী ডেলাওয়ার রাজ্যে তাঁদের বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনার কথা ওবামাকে জানান। তখন প্রেসিডেন্ট ওবামা তাকে বাড়ি বিক্রি করতে বারণ করেন এবং যত অর্থ লাগবে তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সিএনএনের কাছে সাক্ষাৎকারে ছেলের অকাল মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এ গল্পের সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বাইডেন।

দুর্ঘটনায় মারা যান তার প্রথম স্ত্রী ও কন্যা, ক্যান্সারে ছেলে

১৯৬৬ সালে নেইলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন জো বাইডেন। সেখানে জন্ম নেয় বাইডেনের তিন সন্তান। কিন্তু তৃতীয় সন্তান জন্মের মাত্র এক বছর পর ঘটে যায় ভয়াবহ ঘটনা। ১৯৭২ সালের বড়দিনের আগের রাতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিজের স্ত্রী আর এক বছরের কন্যা সন্তানকে হারিয়েছিলেন। সে যাত্রায় কোনো মতে বেঁচে গিয়েছিল তার দুই পুত্র। মৃত্যুর করুণ ছোবল বাইডেনের প্রথম সংসারকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। তরুণ বয়সেই সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে তার। কিন্তু পারিবারিক জীবনে নেমে আসা এ ভয়ঙ্কর ট্র্যাজেডি তার রাজনৈতিক পথচলা প্রায় থামিয়ে দিয়েছিল। তিন ও চার বছরের ছেলেকে বড় করে তোলার লড়াই শুরু হয় বাইডেনের। পরে বাইডেন বিয়ে করেন জিল বাইডেনকে। ২০১৫ সালেও ফের বড় ধাক্কা লাগে বাইডেন পরিবারে। সে সময় ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছিল তার ৪৬ বছর বয়সী  ছেলের জীবন।

সিনেটর থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট

বাইডেনকে সফল সিনেটর হিসেবেই চেনেন মার্কিনিরা। প্রায় চার দশক ধরে সিনেটরের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার ৫০ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ভিত্তি বলা যায় এ দায়িত্বকে।  ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় চার দশক সিনেটর বাইডেন ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সম্মানের স্মারক হিসেবে কিছু দিনের জন্য মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির প্রধান ছিলেন। কাজ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সরাসরি অস্ত্র হামলায় না যাওয়ার জন্য মার্কিন জনগণ এখনো সিনেটর বাইডেনের কাছে কৃতজ্ঞ। এ ছাড়া বিরোধপূর্ণ বলকান অঞ্চলের সঙ্গে শান্তি আলোচনা এবং সোভিয়েতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের জন্য ন্যাটোর সদস্য বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ সব কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সর্বদা শান্তির পক্ষে থাকা জো বাইডেন দারফুরে হামলা এবং প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আগ্রাসনের কট্টর বিরোধী ছিলেন। রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন। ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তার ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তার অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তার দলের নীতির সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খায়নি। তবু দলে তার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। ২০০৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজেকে তুলে আনেন সামনে। সে সময় বারাক ওবামায় মুগ্ধ মার্কিনিরা। যে কারণে দলে এগিয়ে যান ওবামা। বাইডেনের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে ভুল করেননি ওবামা। বাইডেনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেন তিনি। ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পান জো বাইডেন। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল  পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে

২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার আগে আরও দুবার এ পদে লড়াইয়ে নেমেছিলেন বাইডেন। সিনেটর হিসেবে তার টানা জয় ও জনপ্রিয়তা ডেমোক্র্যাট দলে সব সময় আলোচিত ছিল। সমর্থকদের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে দাঁড় করানোর দাবি ছিল। ১৯৮৭ সালে বাইডেন প্রথম সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন বলে। কিন্তু সিনেট পর্যায়ে নির্বাচনী লড়াই আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়াইটা যে অনেক পার্থক্য তা বুঝতে পারেন। যে কারণে সে সময় নিজে থেকেই সরে যান বাইডেন। কাগজে-কলমে যদিও দেখা যায়, বাইডেন সে সময় পরাজিত হয়েছেন। শারীরিকভাবেও বাইডেনের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে। ১৯৮৮ সালে জানা যায় বাইডেনের মস্তিষ্কের দুটো আর্টারি আকারে বড় হয়ে গেছে। মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের সময় আচমকা তার ফুসফুসে রক্ত জমতে শুরু করে। দরকার হয় আরও এক অস্ত্রোপচারের। তবে প্রেসিডেন্ট পদে হেরে যাওয়া বাইডেন জীবনের কাছে আরও একবার জিতে ফিরেছিলেন। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে সব জটিলতা কাটিয়ে আবারও ফিরেছিলেন ডেলাওয়ারের সিনেটর হয়ে। এরপর ২০০৮ সালে ফের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই শুরু করেন। সেবার বারাক ওবামার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার কাছে পরাজিত হন। কিন্তু ওবামা তাকে সেরা বন্ধু হিসেবেই বুকে টেনে নেন। বারাক ওবামার জয়ের পর আট বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প সবাইকে অবাক করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পরের বছর মেয়াদ ফুরায় বাইডেনেরও। ২০২০ সালের নির্বাচনের জন্য প্রাইমারি ও কানসাসে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনকেই বেছে নেন দলের নেতারা। তৃতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই শুরু করেন বাইডেন। ট্রাম্পের ব্যর্থতা আর খামখেয়ালিপনা তুলে ধরে বাইডেন ভোট চেয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাছে বারবার বলেছেন ঐক্যের কথা। রিপাবলিকানদের আগ্রাসী রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে বাইডেন কতটা সফল হবেন সে নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন ছিল। এ ছাড়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরপর দুবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার রীতি দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে। সেসব চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই বাইডেনকে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হয়।

রাজনীতি নয় পরিবার আগে

রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য দিয়েছেন বাইডেন। সিনেটর নির্বাচিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়। এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়। মারাত্মকভাবে জখম হন তার দুই পুত্রও। এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সিনেটর পদে শপথ গ্রহণ করেন বাইডেন। পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন। তাদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি। বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালেও। ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তার পুত্র জোসেফকে হারান। পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে  সরে আসেন বাইডেন।

তাকে ঘিরে বিতর্ক, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ

রাজনৈতিক জীবনে বাইডেনকে নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক ও অভিযোগ শোনা যায় দুবার। এই দুবারই তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা শুরুর পর অভিযোগগুলো উঠতে শুরু করে। অপেক্ষাকৃত তরুণ বয়সে প্রথমবার যখন বাইডেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন তখন তার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় এ নিয়ে তিনি বেশ সমালোচিত হন। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন তিনি। ২০২০ সালে তার বিরুদ্ধে ওঠে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। এ বছর মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন, ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন। সিনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন রিড। ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হওয়ার পর নতুন করে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনায় উঠে আসে এই অভিযোগ। বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরও কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন।  এ ছাড়া ২০১২ সালে সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। লিখেছেন তানভীর আহমেদ