- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

জিন্দালাশ- ২৪

36

মুহাম্মদ আবদুল খালেক : চোখকে বুঝাতে পারলেও মনকে এখনো বুঝাতে পারিনি। এমনিতে আমার মনটা বড়ো এবং লম্বা। মানুষের কথা হজম করার শক্তি তেমন নেই। পৃথিবীতে দু’টো জিনিসকে বড্ড ভয় পাই-প্রথমত নারী, দ্বিতীয়ত মানুষের কথা। নারীকে যে কেউ ভয় পায়। অন্যতম কারণ নারী একটা মিথ্যা কথা বলার সাথে সাথে সত্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। নারীকে দেখলে আর নারীর সাথে কথা বল্লে পুরুষের চোখ বড়ো হয়ে যায়। এমন অনেক পুরুষ আছে ‘নারী প্রসঙ্গ’ এলেই ইস্তেগফার পড়েন। এরা ভন্ড, প্রতারক। আশরাফুল মাখলুকাতের মধ্যে নারীও আছে- এই কথা ওই পুরুষ জানে না। অন্যদিকে এমন নারীও আছে ‘পুরুষ প্রসঙ্গে’ এলেই ইস্তেগফার পড়া শুরু করে। এসব দ্যাখলে কলিজা ফাইট্টা যায়। অথচ আমরা প্রত্যেকে সুযোগ পেলে নারীর সাথে কথা বলি। প্রয়োজনে বলি, অপ্রয়োজনে বলি। যাক আমি এসব কি লিখছি। আমি কারো কথা বল্ছি না, লিখ্ছি না। গল্প লিখতে কলম ধরেছি। নিজের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার কথা লিখছি। এখানে এমন কোন কথা লিখবো না, যে কথাটি মিছা। লেখকরা ভালো মিস্ত্রী। কখনো আল্দাফাটা গল্প লিখেন, আবার কখনো ভূতের গল্প লিখেন। আমি জিন্দা গল্প লিখতে বসেছি। আমি ২৪টি গল্প লিখবো। কেউ পড়লে লাভও নেই, ক্ষতিও নেই। আমার গল্প আমি পড়বো। আমার স্ত্রী রাশেদা পড়বে। যদিও রাশেদা পড়–য়া নয়। পড়ালেখা বন্ধ হলে ভালো হতো। পড়ালেখা করে’ত কিছু হতে পারিনি। শিক্ষক হয়েছি। যার তার কথা শুনতে হয়। ক্লাসে বলতে গেলে, শুনতে হয়। শিক্ষকের কথা কেউ শুনতে চায় না। শিক্ষকের ব্যথা কেউ বুঝতে চায় না। যার নামে চিন্নী লুটেপুটে খাচ্ছে তাকে কেউ চিনতে চায় না। দ্রুত বদলে যাচ্ছে সবকিছু। শিক্ষকরাও বদলে গেছে। শিক্ষকরা পেটুক। শিক্ষকরা জিন্দালাশ। আমিও জিন্দালাশ। সকলের বেতন বাড়ে জিন্দালাশের বাড়ে না। বেতন বাড়ানোর কথা বল্লে ‘চোখ রাঙায়’। কোথায় যাবো। কিভাবে বেতন কমানো যায়, চিন্তা চল্ছে। খোদ অধ্যক্ষরাও চোখ রাঙায়। জাত ভাই ম্যানেজ ! কথা বল্লেই খতম। মাঝরাতে কখনো কখনো ঘুম ভাঙ্গলে গাঁ চমকে ওঠে। অদ্ভুত বাংলাদেশে বাস করছি। পদ আছে, পদবী আছে। টাকা নেই। টাকার কথা বল্লে দোষ। তখন বলতে সাধ জাগে ‘মানচিত্র’ খাবো। শ্রেণী কক্ষে কতোবার বুঝাতে চেষ্টা করেছি ‘মরা মানুষের জন্যে মান্নত না করি, জিন্দা মানুষের জন্যে মান্নত করি। বহুত বহুত ফায়দা হবে’। মুসলমানরা যেদিন মরা মানুষের জন্য মান্নত করা ছেড়ে দেবে সেদিনই ভাগ্য পরিবর্তন……জান্নাত। বাংলা প্রভাষকের মুখে ধর্মের কথা ! তেমন মানায় না। এম.এ পাশের সনদগুলো তাবিজ বানিয়ে গলায় পরলে হয়তো কিছুটা তরক্কী হতো। ধর্মের পথে চলি না বলেই যতো শতো বিপদ। আমাদের পথে ধর্মকে চালাই। ঠেকায় পড়লেই ‘আল্লাহর’ নাম। ‘আসতে আর যেতে’ (জন্ম ও মৃত্যুতে) এক সময় ধর্ম মানা হতো ছহীহভাবে। এখন বদলে গেছে। লাশের ওপর ফুল, কবরের ওপর ফুল। এমনিতে মাটির ভারে আর চাপে লাশ বেহুশ। ফুলের ভার লাশ সইতে পারবে ? ফুল দিলে কি আর কুল মিলে। কখনোই না। জিন্দালাশকে ফুল দেবো, নেবো। ফুল ফোটে জিন্দার জন্যে। ১৯৯৮ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রামে রসায়ন বিদ্যার রসহীন এক ভদ্র মহিলা আমাকে ফুল দিয়েছিল। নিতে পারিনি, সইতে পারিনি। লাঠির আঘাত সইতে পারবো ফুলের আঘাত যে সইতে পারবো না। ধর্ম, ধার্মিকতা টাকায় চলে। টাকায় সব মাফ। টাকায় হালাল বিক্রি হয়। টাকায় গরমিলে মিল হয়। টাকা পেলে আমি নোট দিই। টাকা নেই বলে ঠোঁঠ মিলে না, মিলাতেও পারি না। তাজ্জব ব্যাপার। এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আল্লামা জমির উদ্দিন নানুপুরী (রাহঃ) এর একটা কথা আমাকে জিন্দালাশে পরিণত করেছে, কথাটি হচ্ছে ‘ইসলামে চিন্তা আছে, নিন্দা নেই’। অন্যের তচ্না করতে আমরা ওস্তাদ। অন্যকে ছোট মনে করে কথা বলা স্বভাবে পরিণত হয়ে গেছে। নিজেকে মনে করছি ‘পাক্কা’ অথচ নিয়ত ধাক্কা খাচ্ছি পাক্কায়। ইসলাম কাউকে নিন্দা করার অধিকার দেয়নি। অন্যের সুখে সুখী, দুঃখে দুঃখী হওয়ার অধিকার দিয়েছে। ইসলামে পুর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নির্দেশনা রয়েছে বলেই অনেকেই ইসলামকে ভয় পায়। এমনকি হাজারে হাজার কাতারে কাতার আলেমরা পর্যন্ত দ্বীন ইসলামকে ভয় পায়। আধুনিক বিজ্ঞানীরা অবশেষে বলতে বাধ্য হয়েছে ‘মায়ের দুধের বিকল্প নেই’। অন্যদিকে অবশেষে আখেরী যামানার দাজ্জালরূপী চিন্তাবিদ ও বস্তুবাদী বুদ্ধিজীবীরা স্বীকার করলো ‘ধর্মীয় পোশাকই ইভটিজিং বন্ধের কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারে’। শোকর আল্হামদুলিল্লাহ। শেষ কথাটা বলা হলো না। বলছি-নারীরা পুরুষদেরকে দেখে চোখের কোণে। কথা বলে মনে মনে। দৈনিক হাজার বার। অথচ নারীরা সেটা স্বীকার করতে চায় না। বজ্জাত। হুশ ঠিক মাথা খারাপ। জিন্দালাশ।

লেখক : সম্পাদক, লোহাগাড়ানিউজ২৪ডটকম;  প্রভাষক- বাংলা, আধুনগর ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা, লোহাগাড়া।