- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

জামাই বাজারে জামাই বউ বাজারে বউ

sharif-12-2-800x494

নিউজ ডেক্স : ময়নার মা তিন কন্যা-সন্তানের জননী। কুমিল্লার মুরাদনগর এলাকার বাসিন্দা। তবে বড় হয়েছেন বাকলিয়া এলাকায়। বাবার দেখাদেখিতে বাকলিয়া বৌবাজার এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন অন্তত ২৫ বছর আগে। এখনো ব্যবসা করেন সেখানে। নিজের ব্যবসার সঙ্গে স্বামীকেও একটি দোকান ধরিয়ে দেন। সেটা জামাই বাজারে। বৌ-জামাই দুইজনই দুই বাজারে ব্যবসা করেন।

ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দিকে বাকলিয়ার তুলাতলী এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তার ধারে ভ্যানে করে বেচাকেনা শুরু হয়। ভ্যানে করে সবজি, মাছ বিক্রি করা হত। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। রাস্তায় ভ্যান দাঁড়িয়ে রাখার কারণে রাস্তায় চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হয়। ২০০০ সালের দিকে এলাকাবাসীর বেচাকেনার সুবিধার জন্য স্থানীয় আবদুল নুর ও আবদুস সোবহান পৈত্রিক জায়গায় মাটি ভরাট করে বাজার চালু করে। সীমিত আকারের দোকান বসিয়ে বেচাকেনা শুরু হয়। এখন দোকানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বাজারের কদর।

তুলাতলী এলাকায় বাজার স্থাপন করা হলেও নামকরণে ভিন্নতা আসে। বাজারের এক কিলোমিটার দূরে বাকলিয়া এলাকায় বৌবাজার এলাকায় একটি বাজার রয়েছে। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বেশির ভাগ মেয়ে বা বৌ। ওই বাজারটি বৌবাজার নামে অভিহিত। ওই বাজারে সঙ্গে মিল রেখে তুলাতলীর নতুন বাজারটির নামকরণ করা হয় জামাই বাজার।

সরেজমিন দেখা যায়, জামাই বাজারে সেমি পাকা মিলে অর্ধ শতাধিক দোকান রয়েছে। এসব দোকানে মাছ, মাংস, সবজি, নিত্য ও ভোগ্যপণ্যসামগ্রী বিকিকিনি চলছে। দোকানগুলোর বিক্রেতা পুরুষ।

দোকানিরা জানান, দৈনিক ভাড়া ভিত্তিতে বেচাকেনা করা হয়। মাছের দোকান থেকে ৬০ টাকা। সবজির দোকান থেকে ৫০ টাকা, এরসঙ্গে দৈনিক বিদ্যুৎ ও জেনারেল বাবদ ২০ টাকা নেয়া হয়। মুদির দোকান থেকে মাসে দোকানভেদে সাড়ে তিন ও চার হাজার টাকা ভাড়া আদায় করা হয়।

বাকলিয়ার তুলাতলী এলাকাটি শ্রমঘন এলাকা। অধিকাংশই কুমিল্লার এলাকার অধিবাসী। বাসিন্দাদের বেশির ভাগ গার্মেন্টস শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান শ্রমিকের বসবাস। নারী শ্রমিকেরা ভোরে বাজার-সওদা করে রান্নাবান্না করে কাজে যান। তাই ভোর থেকে বাজারের বেচাকেনা শুরু হয়। একইভাবে বিকেল ও সন্ধ্যা বেলায় ভালো বেচাকেনা হয়। পুরোদিনের মধ্যে ভোর ও সন্ধ্যায় বেশি বেচাকেনা হয়।

বাজারের চারদিকে গড়ে ওঠে অনেক দালান-কোঠা। তবে গার্মেন্টকর্মী, শ্রমিক ও রিকশাচালকসহ নি¤œআয়ের লোকজনের বসবাস বেশি। শাক-সবজি থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, মুরগি, সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ছোট-বড় অনেক দোকান গড়ে ওঠেছে। বাজারের আশপাশে পাকা দালান গড়ে ওঠেছে। ঘনবসতি অধ্যুষিত বলে বাজারে বেচাকেনা ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মালিকের পক্ষে বাজারটি দেখভালো করে মো. জাবেদ হোসেন। তিনি বলেন, আগে খোলা অবস্থায় বেচাকেনা হত। বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যেত। এখন মাটি ভরাট করে উঁচু করা হয়েছে। উপরে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার জন্য এসব করা হয়েছে। এখন বেচাকেনায় কোনো সমস্যা নেই। তিনি আরও বলেন, বাজারের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার জন্য তিন জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে।

কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর এলাকার আবদুর রহিম জানান, শুরু থেকে এখানে ব্যবসা করে আসছে। প্রথম দিকে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি দোকান রাস্তার ধারে বসত। বাজার প্রতিষ্ঠার পর শৃঙ্খলা ফিরেছে। সবাই বাজারে ঢুকে গেছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্য ভালো হয়েছে।

১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইয়াছিন চৌধুরী আশু বলেন, বাজারটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। এখানে সিটি করপোরেশনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। জায়গার মালিকেরাই সব দেখাশোনা করেন। তিনি আরও বলেন, এলাকাটিতে শ্রমঘন ও নি¤œ আয়ের লোকজনের বসবাস। এলাকার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। -পূর্বকোণ