Home | অন্যান্য সংবাদ | জলাবদ্ধতার মধ্যেও সবজি চাষের উপায়

জলাবদ্ধতার মধ্যেও সবজি চাষের উপায়

214500kalerkantho-3

নিউজ ডেক্স : রাউজানের কৃষক কোব্বাত মিয়া। অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জমাটপানি এবং বন্যা-জলাবদ্ধতায়ও সবজিচাষ করার একটি উপায় বের করেছেন তিনি। চলতি বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকা জমিতে ধুন্দুল চাষ করে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই কৃষক …

বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে জমাটপানি এবং বন্যা ও জলাবদ্ধতার মধ্যেও সবজিচাষের একটি উপায় বের করেছেন রাউজানের এক কৃষক। তাঁর নাম কোব্বাত মিয়া। তাঁর বাড়ি রাউজান ইউনিয়নের শমসের নগর গ্রামে। বর্ষা মৌসুমে এক থেকে দেড় ফুট পানিতে নিমজ্জিত জমিতে বস্তা এবং এর ভেতর মাটি দিয়ে ধুন্দুল (চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় ‘করুল’) চাষাবাদ করে সফল হয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ওই কৃষক।

তাঁর এই সবজিক্ষেতের সাফল্যে এলাকাবাসী বেশ উজ্জীবিত। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে আগামী বর্ষায় ধুন্দুলের পাশাপাশি শসা, শসিন্দা, ঝিঙেসহ নানাজাতের সবজিক্ষেত করার স্বপ্ন দেখছেন কোব্বাত মিয়া। কৃষি অধিদপ্তরের উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সিকু বড়ুয়ার মতে, ওই পদ্ধতিতে সারাদেশে এই প্রথম সবজিচাষ করা হলো।

কৃষক কোব্বাত মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বাড়ির আশপাশে এবং অন্যান্য জমি বর্ষা মৌসুমে সবসময় পার্শ্ববর্তী খালের পানি, বৃষ্টির পানি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের নিমজ্জিত থাকে। তাছাড়া ওই জমিতে ধানও কম হতো।

এ কারণে বর্ষায় এসব জমিতে কীভাবে আবাদ করা যায়, তা নিয়ে গত তিন বছর ধরে চিন্তা করতে থাকি। দুই মাস আগে আসে মাথায় আসে পানির মধ্যে বস্তার ভেতর মাটি দিয়ে ধুন্দুল চাষের বিষয়টি। ’

বিষয়টি নিয়ে ওই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সিকু বড়ুয়ার শরাণাপন্ন হন কোব্বাত মিয়া। তিনি এ কাজে তাঁকে বেশ উৎসাহ দিয়েছেন।

‘নিজের চার গণ্ডা অনাবাদি জমিতে ওই পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে ধুন্দুল চাষ শুরু করি। প্রথমে ৪০টি বস্তায় ৪০টি ধুন্দুল চারা লাগানো হয়। লতাবৃক্ষ যাতে উপরিভাগে সঠিকভাবে ঝুলে থাকতে পারে, সেজন্য বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এখানে সেক্স পেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হয়। এ কারণে ক্ষেতে কোনো ধরনের পোকা আক্রমণ করতে পারছে না। এ চাষে এ পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে চার হাজার টাকা। দুই মাসের ব্যবধানে এখানে খুব ভালো ফলন এসেছে। আরো অনেক চারায় ফুটেছে ফুলের কলি। এগুলোতেও আসবে ফল। ’-বলেন কোব্বাত মিয়া।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত দুই বাজারে ১৫ কেজি ধুন্দুল বিক্রি করা হয়েছে। যার মূল্য ৭৫০ টাকা। তবে এখনো বেশির ভাগ ফুল ফুটে আছে। সেক্স পেরোমন ফাঁদ বসায় শতভাগ ফলনের আশা করছেন তিনি। তাতে কমপক্ষে ২০-২৫ হাজার টাকার ধুন্দুল বিক্রি করা যাবে।

কোব্বাত মিয়া বললেন ‘আলহামদুলিল্লাহ, নতুন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্ষা মৌসুমে সবজি ফলনের পথ সুগম হওয়ায় ভালো লাগছে। আনন্দ লাগছে। পরীক্ষামূলক চাষ করে এখন পুরোপুরি নিশ্চিত হলাম, এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রজাতির সবজিচাষ বর্ষায়ও সম্ভব। এ কারণে আগামী বর্ষায় আমার নিজের, বড়ভাই নুরুল আলম এবং প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এক কানি জমি বর্গা নিয়ে ধুন্দুল, শসা, শসিন্দা, ঝিঙেসহ নানাজাতের সবজিক্ষেত করব। ’

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সিকু বড়ুয়া বলেন, ‘যে পদ্ধতিতে কোব্বাত মিয়া ধুন্দুল চাষ করে সাফল্য পেতে শুরু করেছেন, সেই পদ্ধতি এখনো চট্টগ্রাম তথা দেশের কোথাও ব্যবহার হয়নি।

পদ্ধতিটি প্রথম সারাদেশের মধ্যে রাউজানে সবজিচাষে ব্যবহার হলো। তবে দেশের নিম্নাঞ্চলে পানির মধ্যে বিশেষ কায়দায় অর্থাৎ পানির উপর মাচার সাহায্যে কিংবা কচুরিপানাসহ নানাজাতের জলজ উদ্ভিদ দিয়ে সবজিচাষ হলেও বস্তার ভেতর মাটি দিয়ে, তা আবার এক-দেড় ফুট পানির মধ্যে রেখে সবজিচাষ এখনো কোথাও দেখা যায়নি। এক্ষেত্রে এটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। ’

সিকু বড়ুয়া জানান, পরীক্ষামূলক এ পদ্ধতিতে সফলতা আসায় রাউজানের নিম্নাঞ্চলের কৃষক এখন থেকে শুধু শীতকালীন সবজিক্ষেত নয়, বর্ষা মৌসুমেও সবজির উৎপাদন করতে পারবেন। বিশেষ করে উপজেলার নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত পূর্ব গুজরা, পশ্চিম গুজরা, উরকিরচর, বিনাজুরী, নোয়াপাড়া, কদলপুরের একাংশসহ পৌরসভার নিম্নাঞ্চলগুলোতে বর্ষায় এ ধরনের চাষ সম্ভব। বর্তমানে এসব এলাকায় শীতকালীন ছাড়া বর্ষাকালীন কোনো সবজি উৎপাদন হয় না। এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে রাউজানের উৎপাদিত সবজি দিয়েই উপজেলার মানুষের সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব হতে পারে। বস্তা ও মাটি পদ্ধতির এই চাষে ধুন্দুল, শসা, শসিন্দা, ঝিঙে ছাড়াও ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্নজাতের সবজি চাষ করা যেতে পারে। ’

কৃষি কর্মকর্তা সিকু বড়ুয়া আরো বলেন, ‘এ পদ্ধতির চাষ করতে আমি কোব্বাত মিয়াকে সবসময় নানা পরামর্শ দিয়েছি। তিনি তা পালন করায় এ চাষে শতভাগ সাফল্য ধরা দিচ্ছে। আমার পরামর্শে সেক্স পেরোমন ফাঁদ বসানোর কারণে পোকামাকড় আর ক্ষেতে আঘাত আনতে পারছে না। এ কারণে শতভাগ ফল ধরার আগাম বার্তা দিচ্ছে সব চারায় ধুন্দুলের ফুল এসে। তবে ওই জমিতে ধুন্দুল চাষের ফাঁকে ফাঁকে ধানচাষও করা যাবে। ’

জানা যায়, উপজেলার শমসেরনগর গ্রামের কৃষক কোব্বাত মিয়া ওমানে পাঁচ বছর ছিলেন। সেখানেও সবজিচাষ করতেন তিনি। পরে দেশে এসে চাষাবাদ শুরু করেন। তাঁর নতুন পদ্ধতিতে সবজিচাষ এলাকার কৃষকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। তাঁরাও এ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে

আগামীতে বর্ষাকালীন মৌসুমে সবজি চাষ করার আশা প্রকাশ করেছেন।

-কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!