- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়ে আত্মহত্যা করলেন চবি শিক্ষার্থী

নিউজ ডেক্স : চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়ে শেষ রাতে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন নাইমুল হাসান নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক শিক্ষার্থী। শুক্রবার (৫ মার্চ) দিনগত রাত তিনটার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা যায়। নাইমুল ক্যারিয়ার ও সেশনজট নিয়ে বেশ কিছুদিন হতাশাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার বন্ধুরা।

নাইমুল হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার সোনাইপুল গ্রামে। বাবা মো. কামাল হোসেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন।

নাইমুলের পরিবারের বরাত দিয়ে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাইমুলের প্রতিবেশী ও সহপাঠী মো. আরমান। তিনি বলেন, “শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক তিনটার দিকে নাইমুল আত্মহত্যা করেছে। আবদ্ধ বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।”

তিনি বলেন, “পারিবারিক তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। মানসিক হতাশাগ্রস্ততার কারণে এমনটি করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেমনটি সে লিখেছে। সকল পাবলিক পরীক্ষা পরীক্ষায় সে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। সেনাবাহিনীর অফিসার পদে দুইবার ও মেডিকেলে ভর্তির জন্য দুইবার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এর জন্য সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়ার ড্রপও দিয়েছিল। এজন্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। আর সাম্প্রতিক সময়ে সেশনজট ও ক্যারিয়ার নিয়ে খুব হতাশাগ্রস্ত ছিল।”

চিরকুটে নাইমুল হাসান লিখেছেন, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়, আমার বেঁচে থাকার জন্য কোনো ইচ্ছা নেই তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। ডারউইন বলেছিলেন, survival for the fittest, but I am not even fit. আমার জন্য কেউ কখনো কষ্ট পেয়ে থাকলে, পারলে মাফ করে দিয়েন। আরও লিখেছেন, আম্মু আমাকে মাফ করে দিয়েন, লিমনের খেয়াল রাখিয়েন। আব্বু আমাকে সফল করার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন, আমি পারিনি, তাই ক্ষমাপ্রার্থী।

এ ব্যাপারে চবি রসায়ন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. শাহানারা বেগম বলেন, “নাইমুলের মৃত্যুর খবর শুনেছি। সঠিক করে বলতে পারছি না কি হয়েছে আসলে। তবে ওর বন্ধুরা বলল সে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা দেয় নাই। প্রথম বর্ষেই থেকে গেছে। তার কয়েকজন বন্ধু খাগড়াছড়ি যাচ্ছে। ওরা গেলে আরো কিছু খবর পাবে। তার অভিভাবকের সাথে কথা হয়নি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, “এ ব্যাপারে তার বিভাগের শিক্ষকদের সাথে কথা হয়েছে। কিছু বিষয় নিয়ে সে মনে হয় হতাশাগ্রস্ত ছিল। যার কারণেই এরকমটি হয়েছে। সুইসাইড নোটেও আমরা এমনটি দেখেছি। তবে জীবনে উত্থান-পতন আসবে, তাই বলে আত্মহত্যা করা সঠিক সিদ্ধান্ত নয় মনে করি।”

নাইমুলের আত্মহত্যার সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বন্ধু, সিনিয়র-জুনিয়র অনেকে শোক প্রকাশ করেন। আবার পোস্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন আত্মহত্যা করেন তার খুঁজে বের করারও আহ্বান জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েগুলো কেন এত আত্নহত্যা করে তার উপযুক্ত কারণগুলো অনুসন্ধান করা দরকার, অন্যথায় আরো প্রাণ ঝরবে।”

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, “সম্প্রতি একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম—সদ্য পড়াশোনা শেষ করা বন্ধুদের মধ্যে যাদের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে কথা হয়েছিল, তারা অনেকে হতাশাগ্রস্ত। করোনায় কেমন যেন এক ধরনের গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের উচিত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া।” আজাদী অনলাইন