- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

চমেক হাসপাতালের সামনেই রাসায়নিক গুদাম

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরনো একটি ভবনের স্টোর রুমে দীর্ঘ সময় ধরে এসিড ও রাসায়নিকের মতো দাহ্য পদার্থ পড়ে আছে। কলেজের নতুন দশতলা একাডেমিক ভবনটির সাথে লাগোয়া পুরনো দোতলা একটি ভবন রয়েছে। চমেক হাসপাতালের সম্মুখ অংশে এ ভবনটি ফার্মাকোলজি ভবন নামেই পরিচিত। যা এখন জরাজীর্ণ ও অকেজো প্রায়। ভবনটির দোতলায় ফার্মাকোলজি বিভাগের স্টোর রুমে এসব দাহ্য পদার্থ তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অবশ্য, ফার্মাকোলজি বিভাগটি বেশ কয় বছর আগে সেখান থেকে নতুন একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে স্টোর রুমটি আগের মতোই তালাবদ্ধ রয়েছে। যার কারণে স্টোর রুমটিকে রাসায়নিকের ‘বিপজ্জনক’ গোডাউন হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে সেখানে কি কি রাসায়নিক আছে এবং কি পরিমাণ আছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংশ্লিষ্টরা দিতে পারেননি। চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. শামীম হাসান বলছেন, স্টোর রুমটিতে দাহ্য পদার্থ থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। তবে কি কি রাসায়নিক বা কেমিক্যাল আছে এবং কি পরিমাণ আছে, তা এখনো জানতে পারিনি। যদিও স্টোর রুমে মজুদ থাকা রাসায়নিকের তালিকা চেয়ে রোববার (গতকাল) ফার্মাকোলজি বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ফার্মাকোলজি বিভাগের সংশ্লিষ্টরাই হয়ত ভালো বলতে পারবেন বলে জানান চমেক অধ্যক্ষ।

সুনির্দিষ্টভাবে বলতে না পারলেও স্টোর রুমটিতে এসিড, এলক্যালি ও রি-এজেন্টসহ বিভিন্ন রাসায়নিক (দাহ্য পদার্থ) থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন চমেকের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। মেডিকেল কলেজের জন্মলগ্নে ফার্মাকোলজি বিভাগের ব্যবহারিক ও ল্যাবরেটরিতে ব্যবহারের জন্য এসব দাহ্য পদার্থ কেনা হয়ে থাকতে পারে জানিয়ে ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, তখন কেনা হলেও এসব দাহ্য পদার্থ হয়তো ব্যবহার হয়নি। যার কারণে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। এসব দাহ্য পদার্থ এখন বিপজ্জনক অবস্থায় থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে জরুরি ভিত্তিতে এসব দাহ্য পদার্থ সেখান থেকে অপসারণ করার পরামর্শ দিয়ে ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, নয়তো যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর পাশে হাসপাতাল থাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনায় জান-মালের বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৭ সালে। ফার্মাকোলজিসহ কয়েকটি বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম চালু হয় চিকিৎসাবিদ্যার অন্যতম এ বিদ্যাপীঠের। মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরুর আগে থেকেই দুতলা ভবনটি ছিল সেখানে। যা হাসপাতালের কেবিন হিসেবে ব্যবহার হতো। পরে এই ভবনেই ফার্মাকোলজিসহ কয়েকটি বিভাগ নিয়ে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম চালু হয়। সে-ই থেকে ভবনটি ফার্মাকোলজি ভবন নামেই পরিচিত। যদিও বিভাগটি এখন দশতলা নতুন একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ফার্মাকোলজি বিভাগ ছাড়াও ভবনটিতে ফরেনসিক মেডিসিন, কমিউনিটি মেডিসিন ও ডেন্টালের আংশিক কার্যক্রম চালু ছিল। বর্তমানে সবকয়টি বিভাগ সেখান থেকে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে পুরনো এই ভবনের ২য় তলায় স্টোর রুমটির পাশাপাশি চিকিৎসকদের একটি লাইব্রেরি রয়েছে। আর নিচতলায় সাপের বিষ নিয়ে একটি গবেষণাগারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন সন্ধানীর একটি অফিস রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- দাহ্য পদার্থ মজুদ থাকায় নিকট অতীতে কেউ ফার্মাকোলজির স্টোর রুমটির তালা খুলতে চেষ্টা করেনি। যদিও কত সাল থেকে রুমটি তালাবদ্ধ সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেন নি বিভাগ ও কলেজ সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন- রাসায়নিক বা দাহ্য পদার্থ থাকায় ওই স্টোর রুমটি অনেকটা আতঙ্কের রুম হিসেবে পরিচিত। যার কারণে কেউ এ পর্যন্ত রুমটিতে প্রবেশের কথা ভাবেনি। তালাও খুলতে চেষ্টা করেনি। যেভাবে ছিল, সেভাবেই আছে।

আনুমানিক স্বাধীনতার আগে থেকেই স্টোর রুমটিতে এসব দাহ্য পদার্থ মজুদ থাকতে পারে বলে জানান ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। চমেকে’র সাবেক এই অধ্যক্ষ বলেন- ১৯৭৯ সালের দিকে আমরা যখন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম, তখনো এসব দাহ্য পদার্থ সেখানে মজুদ ছিল। সে হিসেবে বলতে পারি- স্বাধীনতার আগে থেকেই হয়তো এসব দাহ্য পদার্থ স্টোর রুমটিতে ছিল।

এসব দাহ্য পদার্থ ‘বিপদজনক’ অবস্থায় থাকতে পারে মন্তব্য করে জরুরি ভিত্তিতে এসব রাসায়নিক অপসারণের পরামর্শ ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের। তিনি বলেন, যেহেতু বিপদের আশঙ্কা আছে, সেহেতু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে এসব দাহ্য পদার্থ অপসারণ করতে হবে। কারণ, যেন তেন ভাবে এসব দাহ্য পদার্থ অপসারণ করা যাবে না। তবে এসব দাহ্য পদার্থ যত দ্রুত অপসারণ করা যায়, ততই মঙ্গল বলেও মন্তব্য করেন ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।

এদিকে, ফার্মাকোলজি বিভাগ থেকে স্টোর রুমটিতে মজুদ থাকা রাসায়নিক সংক্রান্ত তালিকা পাওয়ার পর এসব অপসারণে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. শামীম হাসান। তিনি বলেন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং চবির রসায়ন বিভাগের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এসব দাহ্য পদার্থ অপসারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দৈনিক আজাদী