নিউজ ডেক্স : চন্দনাইশে বিয়ের খাবার খেয়ে পেট ব্যথা, বমি ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত হয়েছেন বর-কনেসহ অন্তত ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ। আক্রান্তরা চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন গত ২ দিন ধরে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শুক্রবার উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মাহাবু চেয়ারম্যান বাড়ির মাজুল গণির ছেলে সালমান মাসুদের সাথে একই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড শাহসুফি বাড়ির কামাল উদ্দিনের মেয়ে নেহা আকতারের বিয়ে ঠিক হয়। এ উপলক্ষে গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বাদামতলস্থ একটি কমিউনিটি সেন্টারে বরযাত্রীসহ আনুমানিক ২ হাজার অতিথির জন্য প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।
এতে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বরযাত্রীসহ অতিথিরা যোগ দেন। যথারীতি খাওয়া-দাওয়া শেষে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর, কনেসহ আত্মীয়-স্বজনরা চলে যান নিজ নিজ গন্তব্যে। কিন্ত পর দিন গতকাল শনিবার থেকে বিয়ের খাবার খাওয়া অনেকেই অসুস্থ হতে শুরু করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে বিজিসি ট্রাস্টে ৫ জন, ১০ জন করে ভর্তি হতে শুরু করেন আক্রান্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বর্তমানে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই শতাধিক আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। ভর্তি হচ্ছেন অসংখ্য আক্রান্ত।
কনের মা কুসুম আকতার, নানা আনোয়ার হোসেন, চাচা শাহ আলমসহ অনেকেই বর্তমানে বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা। বর্তমানে চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
বরের পিতা-মাতাসহ আক্রান্তদের মধ্যে অনেকই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পটিয়া সেন্ট্রাল হাসপাতাল, দোহাজারী হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে আক্রান্ত অসংখ্য রোগী ভর্তি রয়েছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই আবার স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আনোয়ারা উপজেলার বশর নামে একজন বাবুর্চি বিয়ের রান্না-বান্না করেন। তবে মোবাইল ফোন নম্বর না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
চিকিৎসকরা জানান, স্বাদ বৃদ্ধি ও রং সুন্দর করার জন্য অনেক সময় বাবুর্চিরা খাবারে রাসায়নিক ব্যবহার করেন যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ধারণা করা হচ্ছে এ কারণে খাবারে এ ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করায় খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিস্তারিত জানা যাবে।
কাঞ্চননগর এলাকার ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম জানান, বিয়ের খাবার খেয়ে তার চাচাতো ভাই আহমদ শফি আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি আজ রবিবার বিকেলে হাসপাতালে দেখতে যান তার চাচাতো ভাইকে। হাসপাতালের মেঝেসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে অসংখ্য আক্রান্ত ব্যক্তি ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি জানান, কনের মাতাও সেখানে ভর্তি রয়েছেন।
আক্রান্ত আহমদ শফি জানান, শুক্রবার খাবার খাওয়ার পর শনিবার সকালে তার পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হলে বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতালে ভর্তি হন।
বর মাসুদের চাচা এড. আবু ছালেহ জানান, বিয়ের খাবার খাওয়ার পর অনেকেরই খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়েছে। বিজিসি ট্রাস্টসহ বিভিন্ন হাসপাতালে অনেকেই ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে কনেকেও বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল শুক্কুর কোম্পানি জানান, খবর পেয়ে তিনি বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতালে ভর্তিকৃত আক্রান্ত রোগীদের দেখতে যান। সেখানে অসংখ্য আক্রান্ত ব্যক্তি ভর্তি রয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও অনেকেই পটিয়া, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ(চমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে শুনেছেন তিনি।
চন্দনাইশ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আবু রাশেদ মো. নুর উদ্দিন জানান, গত শুক্রবার বিয়ের খাবার খাওয়ার ২৪ ঘন্টা পর থেকে আক্রান্ত হতে শুরু করে লোকজন। পাতলা পায়খানা, বমি ও পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ১০ জন ভর্তি হয়েছেন। ইতিমধ্যে ২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রুমা ভট্টাচার্য্য জানান, আক্রান্তদের মধ্যে চন্দনাইশ হাসপাতালে ৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। তিনি আরো জানান, পরীক্ষার পর জানা যাবে খাবারে কিছু মেশানো হয়েছে কি না। এছাড়াও পঁচা, বাসি কিছুর কারণেও হয়তো বা খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিয়ের খাবার খেয়ে বর-কনেসহ বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমরা বিষয়টি খোঁজখবর নিচ্ছি। অতিরিক্ত গরমের কারণে অথবা অন্য কোনো কারণেও খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে থাকতে পারে।” -আজাদী অনলাইন