- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর নিয়োগ বাতিলে ৭ দিনের আল্টিমেটাম

A0-4

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির’ অভিযোগ এনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ‘আমরা চট্টলবাসী’ নামে একটি সংগঠন। সমাবেশ থেকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লস্কর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। একই সাথে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেয়া হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

গতকাল সকালে বন্দর ভবনের সামনে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে রাজনৈতিক নেতাকর্মী, পেশাজীবী, স্থানীয় লোকজন এবং বন্দরের লস্কর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর। সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় হয়ত মাদারীপুর জেলাকে বিভাগ আর চট্টগ্রাম বিভাগকে জেলা মনে করেছিলেন। এই বৈষম্যের কারণেই চট্টগ্রামের ছেলেরা নিয়োগ পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতির কাছে হেরে গেছে যার দায়ভার মন্ত্রী মহোদয়কে নিতে হবে। আপনারা জানেন, চট্টগ্রাম বিভাগে মোট এগারোটি জেলা আছে। কিন্তু ওইসব জেলা থেকে নেয়া হয়েছে মাত্র ২৮ জন। কিন্তু মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্য অনুযায়ী শুধুমাত্র মাদারিপুর থেকে নেয়া হয়েছে সাতজন। সেই হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আমরা ৭৭ জন পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটিতো আর হয়নি। মন্ত্রী মহোদয় আরো বলেছেন, মাদারীপুরের প্রার্থীরা মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন। আপনারা জানেন, লস্কর পদটি চতুর্থ শ্রেণীর। এই পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে অষ্টম শ্রেণি পাস। এখানে কোনো লিখিত পরীক্ষা হয় না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে মেধার মূল্যায়ন হলো?’

নুরুল আজিম রনি বলেন, ‘বন্দরের নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল (এনসিটি) করার সময় অনেকেই জায়গা হারিয়েছেন। তাদেরকে আরেক জায়গায় পুনর্বাসন করা হয়েছে, কিন্তু আমরা জেনেছি এখন পর্যন্ত তাদেরকে জমির রেজিস্ট্রি দেয়া হয়নি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সদস্যদের বন্দরে চাকরি দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে কি হচ্ছে, সেটি তো লস্করের মতো চতুর্থ শ্রেণির একটি পদের মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে। আমাদের দাবি হচ্ছে, আমরা কোনো ধরণের বৈষম্য চাই না। চট্টগ্রামের ছেলেরা জেলা কোটা অনুযায়ী যতটা চাকরি প্রাপ্য ততটা চাকরি যেন দেয়া হয়। আমরা লস্কর নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাতিল এবং সব জেলা থেকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুনরায় লস্কর নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। সেইজন্য আমরা বন্দর কর্তৃপ কে সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছি। এই সাতদিনের মধ্যে দাবি মানা না হলে আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিকদের সাথে বসবো। তখন হয়তো লাগাতার আন্দোনের ডাক আসতে পারে। এছাড়া বন্দরের পরীক্ষা ঢাকায় নেয়ার বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান মহোদয় যে বক্তব্য দিয়েছেন এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী বন্দরের পরীক্ষা ঢাকায় নয়, চট্টগ্রামেই নেয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে হাসান মনসুর বলেন, কোটা নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম থেকে ৫ দশমিক ২৯, বান্দরবান থেকে শূন্য দশমিক ২৭, কক্সবাজার ১ দশমিক ৫৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১ দশমিক ৯৭, চাঁদপুর থেকে ১ দশমিক ৬৮, কুমিল্লা থেকে ৩ দশমিক ৭৪, খাগড়াছড়ি থেকে শূন্য দশমিক ৪৩, ফেনী থেকে এক শতাংশ, লক্ষ্মীপুর থেকে ১ দশমিক ২০, নোয়াখালী ২ দশমিক ১৬ এবং রাঙ্গামাটি জেলায় শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি লস্কর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এই কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। নৌ মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, মাদারীপুর থেকে সাতজন চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু সরকারী চাকরিতে মাদারীপুর জেলার কোটা হচ্ছে মাত্র শূন্য দশমিক ৮১। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে পোষ্য কোটা ১৭ জনসহ তিনি ৪৫ জন হিসেব দিয়েছেন। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। পোষ্য কোটা শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, এটা সারা দেশের জন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় চট্টগ্রামসহ সারা দেশের লোকজনকে সুযোগ দিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশ ৬৪ জেলা নিয়ে গঠিত। কেবল মাদারীপুর নিয়ে নয়। কাজেই সব জেলার লোকজনকে এখানে চাকরির সুযোগ দিতে হবে।’

হাসান মনসুর বলেন, ‘রাজনীতির অর্থ হচ্ছে জনকল্যাণে কাজ করা। মানুষের সেবা করা। মানুষের সুখে–দুঃখে কাজে লাগা। মানুষের বিপদে আপদে সাহায্য করা। মানুষের অন্ন সংস্থান করা। রাজনীতির অর্থ এটা হতে পারে না– টাকা দিয়ে চাকরি আরেকজনকে দিলাম। আঞ্চলিকতা করলাম, সাম্প্রদায়িকতা করলাম– এগুলো হবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সমঅধিকারে বিশ্বাসী।’ তিনি বলেন, ‘এখন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগ। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলতে হবে। লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য বলি– বন্দরের চাকরিতে সকল প্রকার দুর্নীতি পরিহার করুন। চট্টগ্রামের সন্তানদের, শুধু চাঁটগাইয়াদের বলছি না– চট্টগ্রামে বসবাসরত নাগরিকদের চাকরিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। অন্য যারা পাক অসুবিধা নাই। মাদারিপুরের যদি সাত জন পায় চট্টগ্রামে আমরা ৭৭ জন পাব।’ হাসান মনসুর বলেন, ‘নৌমন্ত্রী ও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে এই আবেদন। আগামী সাতদিনের মধ্যে যদি কোনো ফল না পাই পুনরায় কর্মসূচি দেব।’

মানববন্ধন সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাজী জহুর আহমদ, নগর আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক আব্দুল আহাদ, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান এটলী, চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. হাসান, আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন, মহিলা কাউন্সিলর ফেরদৌসি আকবর, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুর রহমান আজিজ, মেজবাহ উদ্দিন মোরশেদ, আবদুর রহীম শামীম, ছাত্রনেতা জাকারিয়া দস্তগীর, রনি মির্জা, লায়লা আকতার এটলী, ইশরাত জাহান, ফাতেমা বেগম, ছাত্রনেতা আমীর হামজা, রাহুল দাস, ইসমাইল হোসেন, সাইদুর রহমান বাবু প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত রোববার বন্দরে সাউথ ইয়ার্ড কন্টেনার উদ্বোধনকালে লস্কর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে নৌ–মন্ত্রী শাজাহান খান সাংবাদিকদের জানান, ‘মাদারীপুর জেলা থেকে ছয়–সাতজন চাকরি পেয়েছে। তারা পরীক্ষা দিয়ে পাস করে চাকরি পেয়েছে। নিজ মেধায় তারা এ সুযোগ পেয়েছে।’ অপরদিকে ৮৫ জন লস্করের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ৪৫ জনের চাকরি হয়েছে বলে মন্ত্রী দাবি করেন। তবে একইদিন বিকেলে বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সি অডিটোরিয়ামে বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) অভিষেক অনুষ্ঠানে বন্দর চেয়ার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালিদ ইকবাল বলেন, বন্দরে নিয়োগ পাওয়া ৮৫ জন লস্করের মধ্যে ২৮ জনই চট্টগ্রামের। তার মধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে ২৬ জন। বাকি দুইজনের নিয়োগ পেয়েছে পার্বত্য জেলা থেকে। এছাড়া দেশের ২৬টি জেলা থেকে লস্কর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো ধরণের নিয়ম ভাঙ্গা হয়নি।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত রোববার বিকেলে বন্দরের শহীদ ফজলুর রহমান মুন্সি অডিটোরিয়ামের সামনে চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নৌ পরিবহন মন্ত্রীর জেলা মাদারীপুরের চাকরিপপ্রার্থীদের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগ এনে মানববন্ধন সমাবেশ করে বন্দর পোষ্য ও স্থানীয় কোটা অধিকার রক্ষা ঐক্য পরিষদ। -আজাদী প্রতিবেদন