- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

চট্টগ্রামে প্রতিদিন জুয়ার লেনদেন ৪০ কোটি টাকা

442153_169

নিউজ ডেক্স : ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে শত শত জুয়ার আসরে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা। শুধু রাজধানী ঢাকাতেই প্রতি রাতে লেনদেন হতো ১২০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামেও প্রতিদিন জুয়ার বাজারে লেনদেন ৩০-৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত। পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এই তথ্য।

দেশের পুঁজিবাজারের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে জুয়ার বাজার। কেননা, জুয়ার আসরে দৈনিক লেনদেন শেয়ার বাজারের চেয়ে ১৬০ থেকে ১৭০ কোটি টাকা বেশি। দুটো খাতের মধ্যে মিল না থাকলেও জুয়ার আসরের বিস্তার দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ বলে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন। এদিকে সরকারের কড়া মনোভাব এবং ধারাবাহিক অভিযানের কারণে গা ঢাকা দিয়েছেন জুয়াড়িরা।
পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৪ সালে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য সংখ্যা ২৫০। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য ১৪৮টি। ঢাকা শেয়ার বাজারের দৈনিক লেনদেন বর্তমানে গড়ে তিনশ কোটি টাকার কম। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা। দুই শেয়ার বাজার মিলে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় তিনশ ত্রিশ কোটি টাকা।

ঢাকা শহরে ইউরোপ-আমেরিকা, চীন, হংকং, ম্যাকাউ বা সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে ক্যাসিনোগুলো। রাজধানীর ৬০টি স্পটে ক্যাসিনো পরিচালিত হতো। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে চলছিল জমজমাট জুয়ার আসর। ক্যাসিনোগুলোতে ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, কাটাকাটি, নিপুণ, চড়াচড়ি, ডায়েস, চরকি রামিসহ নানা নামের জুয়ার আসর বসত। ঢাকার মতো অভিজাত এবং গোছানো না হলেও চট্টগ্রামের জুয়ার আসরগুলো ছিল জমজমাট। চট্টগ্রামে জুয়ার আসরগুলোতে আর্থিক লেনদেন বিপুল। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্পোর্টিং ক্লাবের পাশাপাশি ফ্ল্যাট বাড়িতেও জুয়ার আসর বসে। শহরের বড় জুয়াড়িরা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের আশীর্বাদে বিস্তার ঘটান জুয়ার আসরের। এক শ্রেণীর অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা এসব আসরের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নগরীতে জুয়ার আসর বসার অভিযোগ ওঠা ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব, ওয়াজিউল্লাহ ইনস্টিটিউট, ফ্রেন্ডস ক্লাব, কোতোয়ালী থানাধীন জলসা মার্কেটের ষষ্ঠ তলায়, গোয়ালপাড়া এলাকায়, আলকরণে সিলকন হোটেল গলিতে, কাজির দেউড়ি এলাকায়, স্টেশন রোডের ফলমন্ডি এলাকায় রেলওয়ে মেন্স সেন্টার, পলোগ্রাউন্ড মেলা কমিউনিটি সেন্টার, এনায়েত বাজার বাটালি রোড ও নন্দনকানন আরএফ পুলিশ প্লাজা।

এছাড়া দেওয়ানহাট ব্রিজের নিচে, আগ্রাবাদ সাউথল্যান্ড সেন্টারের পঞ্চমতলায়, পান্না পাড়ায়, মনসুরাবাদ মাঠের সামনে, ভেলুয়ার দীঘির পাড়ে, ঝর্ণাপাড়া, হাজী পাড়ায় ও পাঠানটুলীতে জুয়ার আসর বসে।

বায়েজিদের আমিন কলোনি এলাকার আশপাশে অন্তত ছয়টি স্থানে জুয়ার আসর বসে। আমিন কলোনি বেলতলা এলাকা, আমিন কলোনির মাঠ এলাকা, টেক্সটাইল জিএম বাংলো পাহাড়ের উপর, রৌফাবাদ রেলক্রসিং এলাকা, স্টারশিপ গলি, শান্তিনগর কলোনিতে জুয়ার আসর বসে বলে স্থানীয়রা তথ্য দিয়েছেন।

সদরঘাট রোডে হোটেল শাহজাহান, চকবাজার আলিফ প্লাজা, চান্দগাঁও আবাসিক এ ব্লকে দৃষ্টি ভবন, শমসের পাড়া জানু মিস্ত্রির বাড়ি, বহদ্দারহাট মদিনা হোটেলের পাশের বিল্ডিং, খুলশী ৪ নম্বর, মেহেদীবাগ ন্যাশনাল হাসপাতাল সংলগ্ন গলি ও ডিসি রোড খালপাড়ে চলে জুয়ার আসর।

অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে অভাবনীয়ভাবে জুয়ার বিস্তার ঘটে। নেপাল, থাইল্যান্ড থেকে প্রশিক্ষিত নারী-পুরুষ এনে পরিচালনা করা হয় জুয়ার আসর। রাজধানী ঢাকায় ক্যাসিনোর নামে যে বিনিয়োগ এবং বিস্তার তা দেশের মানুষের কাছে ছিল অবিশ্বাস্য।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে বাজার থেকে। পাচার হয়েছে শত শত কোটি টাকা। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে জুয়ার বিস্তার মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম বলেন, দুটোকে একত্রে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। দেশের শেয়ার বাজার মৃতপ্রায়। ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে যেভাবে ধস নামে এবং লুটপাট হয়েছে, তাতে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেয়ার বাজার দাঁড়াতে পারেনি।

তিনি বলেন, অপরদিকে জুয়ার আসর বহু বছর ধরে চলে আসছে। পুলিশ জানে, ক্ষমতাসীনরা জানে না বললে ভুল হবে। দুর্নীতি, লুটপাট এবং নানাভাবে পুঁজি লুণ্ঠনের মাধ্যমে কিছু মানুষের হাতে যখন কালো টাকার পাহাড় গড়ে উঠে, তখন তারা জুয়ার আসর এবং মদের আসরে ঝুঁকে পড়ে।

বাংলাদেশে জুয়ার আসরের যে বিস্তার তা অবিশ্বাস্য বলে উল্লেখ করে ড. মইনুল বলেন, এটি অবশ্যই অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। একইসাথে এই ক্যাসিনো কিংবা জুয়া সামাজিক আবহ এবং বন্ধন নষ্ট করার ক্ষেত্রে মারাত্মক রকমের বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিচ্ছে।

সূত্র : দৈনিক আজাদী