- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ ফের বাড়ছে

নিউজ ডেক্স : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের বাড়ছে। গত বেশ কয়েকদিন টানা শতাধিক সংখ্যায় করোনা সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। সর্বশেষ রোববার করোনা সংক্রমিত শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮১ জনে। ১ হাজার ৫৬টি পরীক্ষাকৃত নমুনায় ১৭.১৪ শতাংশের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে এদিন। হিসেবে রোববার শনাক্তের এই হার গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা রোগীতে ভরপুর। বেশ কয়টি হাসপাতালের করোনা ব্লকে ঠাঁই নেই অবস্থা। একটি শয্যাও খালি নেই।

শয্যা খালি না থাকায় করোনা ব্লকে নতুন রোগী ভর্তি নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতালের জিএম মো. সেলিম, পার্কভিউ হাসপাতালের জিএম মো. জিয়াউর রহমান ও ন্যাশনাল হাসপাতালের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমজাদ হোসেন। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ৩৫টি সাধারণ শয্যার পাশাপাশি ৪টি আইসিইউ শয্যা চালু রয়েছে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। আইসিইউ ও সাধারণ শয্যার সবকয়টিতেই রোগী ভর্তি বলে নিশ্চিত করেন হাসপাতালের জিএম মো. সেলিম। ২৮টি (কেবিন) শয্যা এবং ৮টি আইসিইউ শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে পার্কভিউ হাসপাতালে। আইসিইউর একটি শয্যাও খালি নেই জানিয়ে হাসপাতালের জিএম মো. জিয়াউর রহমান বলেন, কেবিনে ২৮টি শয্যা আছে। কিন্তু রোগী ভর্তি আছে ৩০ জন। একই কেবিনে স্বামী-স্ত্রী দুজন করে থাকায় রোগীর সংখ্যা ২ জন বাড়তি। আর ২০টি সাধারণ শয্যায় বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে ন্যাশনাল হাসপাতালে।

২০ শয্যার একটি শয্যাও খালি নেই জানিয়ে হাসপাতালটির পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, করোনা রোগীদের জন্য আলাদা আইসিইউ সেবা আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে পুনরায় চালুর বিষয়ে আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি। শয্যা খালি না থাকায় নতুন কোন রোগী আসলে ভর্তি নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা জানিয়ে এই তিন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন- অনেক রোগী ভর্তি হওয়ার জন্য যোগাযোগ করছে। কিন্তু আমরা শয্যা দিতে পারছিনা। বাধ্য হয়ে অনেক রোগীকে অপেক্ষায় রাখতে হচ্ছে বলেও জানান এসব হাসপাতালের কর্মকর্তারা। আবার কোন কোন রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও জানান তাঁরা।

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নির্ধারিত দুটি সরকারি হাসপাতালের (চমেক ও জেনারেল হাসপাতাল) পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগী বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। যদিও এসব হাসপাতালের কিছু শয্যা এখনো শূন্য রয়েছে। অর্থাৎ এসব হাসপাতালে এখনো নতুন রোগী ভর্তির সুযোগ আছে।

৮/১০ দিন আগেও গড়ে ৫০ জনের সামান্য কম-বেশি রোগী ভর্তি ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ব্লকে। কিন্তুগতকাল সোমবার এ ব্লকে ৭২ জন রোগী ভর্তি ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী করোনা ব্লকে ভর্তি থাকছে। এছাড়া করোনা রোগীদের জন্য আলাদা আইসিইউতে ৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন বলেও জানান হাসপাতাল পরিচালক।

সংক্রমন বাড়তে থাকায় বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, হাসপাতালের ৪র্থ তলায় আরো একটি করোনা ব্লক প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে আরো ৬০টি শয্যায় রোগী ভর্তি করা যাবে। সেন্ট্রাল অঙিজেন, ন্যাজাল ক্যানুলাসহ সব ধরণের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। গত দুই-আড়াই মাস ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমে যায় এ হাসপাতালে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে রোগীর সংখ্যা আবারো বাড়ছে বলে জানান হাসপাতালটির করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম। গত দুই-আড়াই মাসে গড়ে ৩০ জনের কম রোগী ভর্তি ছিলেন এ হাসপাতালে। তবে সোমবার ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৫০ জন বলে জানান ডা. আব্দুর রব মাসুম। আইসিইউতে ৪ জন চিকিৎসাধীন বলেও জানান তিনি।

আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ৬০ শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ৪১টি শয্যায় রোগী ভর্তি আছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক। তাছাড়া ৬টি এইচডিও’র সবকয়টিতেই রোগী ভর্তি বলেও জানান তিনি।

২৭টি শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ম্যাঙ হাসপাতালে। এর মধ্যে গতকাল ১১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির জিএম রঞ্জন প্রসাদ গুপ্ত। আর করোনা রোগীদের জন্য থাকা ৩টি আইসিইউর ২টিতে রোগী ভর্তি বলেও জানান তিনি। সিএসসিআর হাসপাতালে ১১টি শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল ৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন বলে জানান হাসপাতালের সিওও সালাউদ্দিন মাহমুদ। এছাড়া ২টি আইসিইউর একটিতে রোগী ভর্তি বলেও জানান তিনি।

করোনা রোগীর চাপ বাড়লেও চট্টগ্রামে আগের মতো অসহায় পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা নেই বলে মনে করেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন- প্রথম দিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি না নেয়ায় রোগীদের এক প্রকার অসহায় পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এখন কিন্তু এমন অবস্থা নেই। সব বেসরকারি হাসপাতালই করোনা রোগীদের কম-বেশি চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। সংক্রমনের প্রথম দিকে ডাক্তার-নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে এক ধরণের আতঙ্ক ছিল। যা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। এছাড়া করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা নিয়ে আগে ডাক্তাররা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। এখন সে দ্বিধাটাও কেটে গেছে। বলা যায়-করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ডাক্তাররা এখন অনেক বেশি আত্ববিশ্বাসী।

করোনার ২য় ঢেউ শুরু হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, সংক্রমনের উর্ধ্বমুখী হারই বলে দিচ্ছে এরইমধ্যে করোনার ২য় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতেও রোগীর চাপ বাড়ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে যেন কোন ভাবেই সচেতন করা যাচ্ছে না। মানুষ না মানছেন স্বাস্থ্য বিধি, না পড়ছেন মাস্ক। কিন্তু শীতে এই সংক্রমন আরো আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে পারে। যার কারণে এখনই সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। করোনার সংক্রমন থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই মাস্ক পড়ার পাশাপাশি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। দৈনিক আজাদী