- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

চকরিয়ার মাতামুহুরী ব্রিজ ভাঙলেই বিকল্প ব্যবস্থা!

P-12-3-4

নিউজ ডেক্স : একদিকে ব্রিজের মাঝখানে পাটাতন আবার নিচে বালুর বস্তার ঠেস দিয়ে রাখা চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গা পয়েন্টের মাতামুহুরী ব্রিজটি যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পতিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারী যানবাহন উঠামাত্রই পুরো ব্রিজে অতিমাত্রায় কাপুনি শুরু হয়। এ সময় ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে চলাচলরত লোকজনের মাঝে আতঙ্ক দেখা দেয়, এই বুঝি ব্রিজটি ধসে পড়ছে। এই ব্রিজটির ভবিষ্যত কি এনিয়ে কোন মাথাব্যথাই নেই সওজ কর্তৃপক্ষের। তবে ব্রিজটি অতি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে স্বীকার করলেও সওজের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যতদিন সম্ভব হয় ততদিন পর্যন্ত এই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। যদি ব্রিজটি কোন কারণে ধসে পড়ে বা অন্য কোন কারণে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হয় তার আগেই বিকল্প ব্রিজের কাজ শুরু হবে না। অবশ্য ব্রিজটি অকার্যকর হওয়ার পর পাশেই নতুন করে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এজন্য আগে থেকেই সেই প্রস্তুতি রয়েছে সওজের।

অপরদিকে ব্যস্ততম এই মহাসড়কের মাতামুহুরী ব্রিজ দিয়ে যদি যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হবে মহাসড়কের বরইতলী–পেকুয়া–মগনামা সড়ক হয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের পেকুয়া–ঈদমণি এবং চকরিয়ার চৌয়ারফাঁড়ি থেকে চকরিয়া–মহেশখালী সড়কের চকরিয়ার বাটাখালী–চিরিঙ্গা থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সওজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এই রুটকে যদি বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাহলে ভয়াবহ যানজটের শিকার হবে যাত্রীসাধারণ। তাছাড়াও এই বিকল্প সড়কের জন্য অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে কয়েকঘন্টা। সময় ব্যয়ের চাইতে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে বিকল্প এই রুটের তিনটি আঞ্চলিক সড়কের অনেকস্থানে একেবারে সংকুচিত এবং খানাখন্দ থাকায়। আগে থেকে এই তিন সড়কের খানাখন্দ মেরামতসহ যান চলাচল নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ এখন থেকে না নিলে ভবিষ্যতে এর মাশুল গুণতে হবে হাড়ে হাড়ে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া দৈনিক আজাদীকে জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী ব্রিজটি নানা কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আপাতত কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল চালু রাখা হয়েছে। এরইমধ্যে যদি কোন কারণে অকার্যকর হয়ে পড়ে তাহলেই এর পাশে নতুন করে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। তবে এখনই এই বেইলি ব্রিজ নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেওয়া হবে না। বর্তমান ব্রিজটি সম্পূর্ণ অকার্যকর হলেই বেইলি ব্রিজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কটি ব্যস্ততম তাই যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প হিসেবে বরইতলী–পেকুয়া–মগনামা, পিএবিসি আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং চকরিয়া–মহেশখালী সড়ককে ব্যবহার করা হবে। তবে এসব সড়কের যেখানে সমস্যা রয়েছে তা আগেভাগেই ঠিক করে ফেলা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় পাঁচবছর আগে ব্যস্ততম চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী ব্রিজের মাঝখানের একপাশের কিছু অংশে খানাখন্দের সৃষ্টি হলে সেখানে লোহার পাটাতন বসিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে সওজ। এর কিছুদিন না যেতেই অপরাংশে একই সমস্যা দেখা দিলে তাতেও পাটাতন বসিয়ে দেওয়া হয়। এতে ব্রিজের মাঝখানের অংশটি অনেকটা উঁচু দেখাচ্ছিল এবং যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছিল। তখন থেকেই ব্রিজের এই মাঝ অংশটিকে অনেকে সওজের কবর বলেও আখ্যা দেয়। চট্টগ্রাম এলাকার যানবাহনগুলো এই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে তেমন সমস্যার সম্মুখিন না হলেও দূরপাল্লার এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকবোঝাই যানবাহনগুলো বিভিন্ন সময় পতিত হয়েছে দুর্ঘটনায়। শুধুমাত্র ভোররাতে ব্রিজের এই পাটাতন পার হতে গিয়ে উত্তরবঙ্গের পর্যটকবোঝাই একটি বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এই দুর্ঘটনায় ব্রিজের দক্ষিণাংশের রেলিং ভেঙে সরাসরি পর্যটকবোঝাই বাসটি গিয়ে পড়ে প্রায় ২০ ফুট নীচে নদীর চরে। এতে একসঙ্গে শিশু, নারীসহ অন্তত ২০ জনের প্রাণহানি হয়, আহত হয় আরো অসংখ্য পর্যটক। এর পরেও জরাজীর্ণ এই ব্রিজ দিয়ে যানবাহন চলাচল করে আসছে। কিন্তু গেল মে মাসের শুরুতে দ্বিতীয়বারের মতো এই ব্রিজটি পতিত হয় আরেক বিপর্যয়ের মুখে। ব্রিজটির চিরিঙ্গা অংশের একটু আগে জয়েন্টের মধ্যে ধসের সৃষ্টি হলে এর নিচে বালুভর্তি বস্তার ঠেস দিয়ে তার ওপর গাছের গুঁড়ি এবং লোহার এঙ্গেল দিয়ে সেই ধস ঠেকানোর অংশ হিসেবে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আবার বালুভর্তি বস্তা বিছানোর পর চারিদিকে গার্ডারের মতো যেখানে সেখানে ইটের গাঁথুনির প্রাচীরে পহ্মাস্টার করে দেওয়া হয়। বিশাল এই ব্রিজ বালুর থেরাপি দিয়ে কতদিন টিকিয়ে রাখা যাবে তা নিয়ে সন্দিহান মানুষ।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ চকরিয়া কার্যালয় সূত্র জানায়, যান চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে ব্রিজের ওপর দিয়ে যাতে ১০ টনের বেশি ওজনবাহী গাড়ি চলাচল করতে না পারে, সে জন্য ব্রিজের দুই দিকে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

চকরিয়া কার্যালয়ের উপ–সহকারী প্রকৌশলী আবু এহেছান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তফা স্থায়ী সমাধান বিষয়ে বলেন, যতটুকু জানি, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কটি একসময় চার লেনের সড়ক এবং মাতামুহুরী নদীর ওপরও চার লেনের ব্রিজ হবে। এ কারণে এখনই নতুন কোনো ব্রিজ নির্মাণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সওজের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারের সেতু মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করার কথা ছিল। মাতামুহুরী ব্রিজসহ এই মহাসড়কে চারলেনের চারটি ব্রিজ নির্মাণে জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সি) কর্তৃক অর্থ সহায়তা দেবে। তবে এখনো পর্যন্ত কেন এসব ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে না তা বলতে পারেননি তিনি।

সেতুটির ওপর দিয়ে চলাচলকারী বেশ কয়েকজন বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী ব্রিজের ওপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। দিনের বেলায় তেমন সমস্যা না হলেও রাতে দূরপাল্লার বাসগুলো ব্রিজ পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারানো ছাড়াও ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অতি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান করে যান চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি। নইলে যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর তখনই ঘুম ভাঙবে কর্তৃপক্ষের। সওজ সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালে তৎকালীন আরাকান সড়কের চকরিয়ার চিরিঙ্গার মাতামুহুরী নদীর ওপর ৩০০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় চার বছরে ওই নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পর ব্রিজটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেই থেকে ব্রিজটির দেখভাল করে আসছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। -আজাদী