- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

গল্প হলেও সত্যি !

527

ফিরোজা সামাদ : ২৫/৩০ বছর অাগের একটি ঘটনা। তখন মোবাইল প্রথা চালু হয়নি। টেলিফোনেই কাছে দূরে সকলের সাথে কথা হতো। হঠাৎ একদিন ক্রস কানেকশনে পরিচয় হয় এক সহজ সরল ভদ্রলোকের সাথে এক নারীর। দুজনই বিবাহিত । ভদ্রলোক ঢাকায় একা একা থাকেন। প্রাকটিস করেন হাইকোর্টে, ব্যারিষ্টার। ওনার একটি ছেলে লণ্ডনে পড়াশুনা করে,স্ত্রীও ছেলের কাছে থাকেন। ভদ্রলোক প্রায়শ লণ্ডনে যাতায়াত করতেন। সেগুনবাগিচায় তার অভিজাত ফ্ল্যাট। ক্রস কানেকশন থেকে নাম্বার বিনীময়ে তাদের সাথে রাত জেগে কথোপকথন চলতো। মহিলা তার নাম জেবুন্নেছা বলে জানান। তার স্বামী কানাডা প্রবাসী। কথা বলতে বলতে রাত শেষ হয়ে যেতো, তারপরেও কথা অার ফুরায় না। একদিন রমনা পার্কে দেখা করলো দু’জন। সেখান থেকে ভদ্রলোকের গাড়িতেই মিরপুর রোডে মিডনাইট সান চায়নিজ রেষ্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে খেতে খেতে অনেক কথা। মহিলা বললেন তার জীবনের দুঃখের কথা… তার স্বামী প্রবাসে গিয়ে অার একটি বিয়ে করে থাকছেন। তিনি একটি মেয়ে নিয়ে ঝিগাতলায় থাকেন। স্বামী কিছু টাকা পাঠিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করেন। একসময় দুজন দুজনার প্রেমে পড়ে যায়। ধানমন্ডির সবগুলো রেষ্টুরেন্টে তাদের লাঞ্চ অার ডিনার চলতে থাকে। বিভিন্ন সময় ভদ্রলোকের হাতে থাকে দামীয় গিফট বক্স। অাবার মাঝে মাঝেই শপিংমল ঘুরে কেনাকাটা যেনো দুজনার অানন্দের খোরাক হয়ে গিয়েছিলো। বিভিন্ন সময়ে অার্থিক সহায়তা ভদ্রলোক উপযাচক হয়েই করতেন। বিষয়টি এমন হয়ে গিয়েছিলো যে ভদ্রলোক মহিলার সব দায় নিতে নিজেকে প্রস্তুত করে ফেললেন।

এরপরে যা হলো মহিলা হঠাৎ ফোন করা কমিয়ে দিতে দিতে একসময় বন্ধ করে দিলেন। ভদ্রলোক পাগলের মতো হয়ে গেলেন । কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। এমন সময় হঠাৎ একটি ফোন এলো নারী কন্ঠের। কিন্তু অচেনা কন্ঠ। ওই নারী যা বললেন তাতে ভদ্রলোকের মাথায় অাকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ওই নারী তার ফোন নাম্বার দিয়ে বললেন… অামি জেবুর ( জেবুন্নেছা) বন্ধু নিহার বলছি। ভদ্রলোক অাগপাছ ভুলে গিয়ে বললেন… উনি কোথায় ? কেমন অাছে? ভালো অাছে তো ? ভদ্রলোকের হাহাকার শুনে নিহার নামের মহিলার কেমন যেনো মায়া হলো। তারপরেও সে বললো… জেবু মারা গেছে তিনদিন অাগে। অাপনাদের সব কথা অামি জানতাম। ও অসুস্থ অবস্হায় অাপনার নাম্বারটি অামায় দিয়েছে। অামার মনে হলো অাপনাকে জানাই। ভদ্রলোক কেঁদে ফেললেন বললেন… ওনাকে কোথায় রাখা হয়েছে ? অামি কবরটি একবার দেখবো অার জিয়ারত করবো। ওনার মেয়েটি কোথায় ? নিহার নামের মহিলা বললেন…. ওর বাবার বাড়ি পিরোজপুর সেখানে লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে অার মেয়ে ওর বাবা গতকাল নিয়ে গিয়েছে। অসহায়ের মতো ভদ্রলোক কেঁদেকেটে তার বৃদ্ধ বয়সের প্রেমের সমাধি দিলো এই ভাবে… বাসায় মাওলানা ও ইয়াতিম ছাত্রদের এনে কোরঅান তেলাওয়াত করিয়ে দোয়া করলেন। স্মৃতিচারণ করে কেঁদে কেঁদে মাথার বালিশ ভিজিয়ে যখন কিছুটা স্বস্হি ফিরে পেলেন, ঠিক তখনই নিহার নামের জেবুন্নেছার বান্ধবীর কাছ থেকে অাবার একটি ফোন এলো, উনি বললেন… অামি অাপনার সাথে দেখা করতে চাই। নিহারকে ভদ্রলোকের মনে হলো খুব হৃদয়সম্পন্ন জেবুর এক অাত্মিয়। রাজি হয়ে গেলেন, দেখা করতে।

অাবার সেই লালমাটিয়া মিরপুর রোডের মিডনাইট সান রেষ্টুরেন্ট, বসলেন সেই টেবিলে যেখানে বসতেন তার ভালোবাসার জেবুকে নিয়ে। নিহারকে দেখে ভদ্রলোক কেঁদে ফেললেন বললেন….ওর কী হয়েছিলো অামাকে একটু খুলে বলুন। ভদ্রলোকের কান্না দেখে নিহার কঠিনস্বরে বললো….অাপনি এতো সহজ সরল কেনো ? তাইতো ঠকেছেন, অাপনি জেনে নিন জেবু’র কিছুই হয়নি। ও যা যা বলেছে, করেছে সব মিথ্যে। সে তার স্বামীর সাথে কানাডা চলে গিয়েছে গত পরশুদিন। অামাকে দিয়ে সে মিথ্যে ফোন করিয়েছিলো। ভদ্রলোক হা হয়ে শুনছিলেন, এমনটি হতে পারে কখনো ? কোনটা বিশ্বাস করবে ? অাগের সব ঘটনা নাকি অাজকের কথা? তারপরে কি হলো? ভদ্রলোক হঠাৎ উঠে দাড়ালেন, কোনোদিক না তাকিয়ে হনহন করে বেরিয়ে অাসে রেষ্টুরেন্ট থেকে, গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে চলতে থাকে সামনে। পিছনে পড়ে থাকে জেবুন্নেছা নামের এক ছলনাময়ীর বান্ধবী, অর্ডার দেয়া বিভিন্ন খাবার, ওয়েটার অারো কতো কি । গাড়ি চলছে সামনে। কতোদিন পরে অাজ মাথাটা হালকা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি অাজ মারা গেছে জেবুন্নেছা নামের সেই রহস্যময়ী নারী……. !!

বিঃদ্রঃ কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে ক্ষমা করবেন !!