ওমর ফারুক : কোন মৃত্যুই মেনে নেওয়া যায় না। কাছের কারো মৃত্যু হোক কিংবা দূরের কারো? শত্রুর হোক কিংবা মিত্রের? সব মৃত্যুই শোকের। সব মৃত্যুই বুকের ভিতর অজানা হাহাকারের ঢেউ তুলে।
অপঘাত বা এক্সিডেন্টের মৃত্যু হলো বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো বিনা নোটিশের মৃত্যু। এই ধরনের মৃত্যুর জন্য আমাদের একদম প্রস্তুতি থাকে না। এই ধরনের মৃত্যুর কথা বিশ্বাস করতে কিংবা ধাতস্থ হতেই অনেকক্ষণ লেগে যায়। শোক তো আসে আরও পরে।
কয়েকদিন আগে লোহাগাড়ার সাংবাদিক কাইছার হামিদের দুই ছোট ভাইসহ চুনতির জাঙ্গালিয়ায় পনেরোজন রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। এর মধ্যে নিহত জসীমের সাথে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে জানাশোনা ছিলো। দেখা হলে ভাব বিনিময়ের পাশাপাশি টুকটাক কথাও হতো। এমন একটা তরতাজা মানুষ আচানক যে নাই হয়ে যাবে এটা আমার এখনো বিশ্বাস হয় না। আর একসাথে দুইটা ভাই হারানো বড় ভাইটা কীভাবে এটা মেনে নিবে? সেদিন মারা যাওয়া সকলকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুক। আমিন।
চট্টগ্রাম -কক্সবাজার হাইওয়ের একটা কুখ্যাত এক্সিডেন্ট স্পট হলো চুনতির জাঙ্গালিয়া মাজার। এই হাইওয়েতে এমন আরও অনেক স্পট আছে। মৃত্যুর চোরাবালি খ্যাত স্পটগুলোতে প্রায় এক্সিডেন্ট হয় এবং যে বা যারা হারায় সে বা তারা ছাড়া ছাড়া বাকিরা কদিন পর এক্সিডেন্টের কথা বেমালুম ভুলে যায়। আরেকটা এক্সিডেন্ট না হওয়া অবধি আগের এক্সিডেন্টের কথা আর কারো মনে পড়ে না।
এই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ধরে আমাকে মাঝেমাঝে চলাচল করতে হয়। করোনার দিনগুলিতে, লকডাউনের সময়ে বেশ কয়েকবার জাঙ্গালিয়া মাজার পাড়ি দিয়েছি। মাজার এলাকায় গেলে কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া এক্সিডেন্টটার কথা আচানক মনে পড়ে, পা দুটো অবশ হয়ে আসে। গাড়ির গতিও কমে আসে। নিজের ভিতর একটা অজানা আতংক পেয়ে বসে।
মাজার এলাকায় কেন বার বার এক্সিডেন্ট ঘটে সেটা নিয়ে অন্যদের মতো আমিও ভেবেছি। কেন স্পটটা এভাবে মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠেছে? চুনতি অভয়ারণ্য থেকে শুরু করে মাজার পর্যন্ত পুরো রাস্তাটা অজগরের মতো আঁকাবাঁকা। সামনের দিকে তাকালে মনে হবে দশ হাত পরে আর রাস্তা নাই। কিন্তু দশ হাত গেলেই আবার রাস্তা শুরু। পুরো এলাকাটা এমন আঁকাবাঁকা। এতোদিন আমার কাছে মনে হতো এইসব বিপদজনক বাঁকের কারণেই স্পটগুলোতে এক্সিডেন্ট হচ্ছিল।
কিন্তু গত পরশু দিন লোহাগাড়া যাওয়ার সময় আমার ধারণা পাল্টে গেল, বাঁকের চেয়ে বেশি বিপদজনক ড্রাইভারদের শর্টকাট গাড়ি চালানোর মানসিকতা। আমি উত্তর দিকে যাচ্ছিলাম বলে আমার সাইড ছিলো পশ্চিম দিকে। বাঁকে আমি আমার সাইডেই সর্তকভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। সর্বশেষ ঘটে যাওয়া এক্সিডেন্টের কথা তো মাথায় ছিলোই। এমন সময় আচানক কক্সবাজারমুখী একটা ডাম্পার আমার সাউডে শর্টকাট মেরে চলে আসে। আগপাছ কিছু না ভেবে আমার গাড়িটা আমি রাস্তার পাশে নামিয়ে দেই এবং সে যাত্রায় নিজেকে রক্ষা করি। আমার ছোট গাড়ি না হয়ে যদি কোন বড় গাড়ি হতো নিশ্চিত সেদিন আরও একটা বড় এক্সিডেন্ট মাজার এলাকায় ঘটতো।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ের বাঁকগুলো সরলীকরণ করার পাশাপাশি ড্রাইভারদের শর্টকাট চালানোর প্রবণতা কমাতেও উদ্বুদ্ধকরণ করতে হবে। নইলে এই হাইওয়েতে মৃত্যুর মিছিল কমবে না। লেখক : সহকারী শিক্ষা অফিসার, লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।