- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

কর ফাঁকির মামলায় আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক কারাগারে

191631Jail

নিউজ ডেক্স : কর ফাঁকির পাঁচ মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদসহ তিনজন আত্মসমর্পণ করার পর তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা হলেন  দিলদার আহমেদের দুই ভাই গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দায়ের হওয়া ওই মামলাগুলোতে আজ মঙ্গলবার আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।

শুনানি শেষে ঢাকার পৃথক চার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জামিন আবেদন নাকচ করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

দুপুরে রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, রমনা এবং উত্তরা-পূর্ব থানায়  পাঁচ মামলায় আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। বেলা ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পৃথক চার ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে শুনানি হয়।

প্রথমে দিলদার আহমেদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে রাজধানীর উত্তরা-পূর্ব, ধানমন্ডি ও পরে রমনা থানার তিন মামলায় জামিনের শুনানি হয়।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহমুদুল হাসান উত্তরা-পূর্ব থানার মামলায়, ম্যাজিস্ট্রেট নুরুন্নাহার ইয়াসমিন ধানমন্ডি থানার ও দেবব্রত বিশ্বাস রমনা থানার মামলায় শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আহসান হাবীব আসামি গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদের বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানার দুই মামলায় শুনানির পর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আদালতে আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট কাজী নজীব উল্লাহ হিরু ও ফেরদৌস সুলতানা কাকলী জামিন আবেদন শুনানি করেন। শুনানিতে অ্যাডভোকেট নজিব উল্লাহ হিরু বলেন, কোনও ধরনের নোটিশ ছাড়াই শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় অভিযান চালিয়ে স্বর্ণালংকার জব্দ করে শোরুমগুলো সিলগালা করে দেয়।

এর বিরুদ্ধে আসামিরা যখন উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন তখন রাষ্ট্রপক্ষ রিট শুনানিতে সময় নেয়। এর মাঝে  গত ১২ আগস্ট তাদেরকে আসামি করে মামলাগুলো দায়ের করেন।

তিনি বলেন, মামলায় অর্থ পাচারের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। টাকা কীভাবে ও কোথায় পাচার করা হয়েছে- তা মামলার কোথাও বলা নেই। আসামিরা বয়স্ক ও অসুস্থ। উচ্চ আদালত থেকে তারা জামিন পেয়েছিলেন। পলাতক হওয়ার কোনও কারণ ও সম্ভাবনা নাই। প্রত্যেকেই করদাতা। তাদের জামিন দেওয়া হোক।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট থানার প্রসিকিউশন (জিআরও) পুলিশের উপপরিদর্শক ফরিদ আহমেদ, মোজাম্মেল হোসেন, মকবুল হোসেন ও শওকত হোসেন জামিন আবেদনের ঘোর বিরোধিতা করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে শুনানিতে তারা বলেন, আসামিরা মামলাসমূহে গত ২২ আগস্ট হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে হাইকোর্ট তাদের চার সপ্তাহের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। চার সপ্তাহ পর তাদের নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের প্রার্থনা করার কথা ছিল। কিন্তু তারা প্রায় ৯ সপ্তাহ পর এসেছেন। তারা জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেন। এ অবস্থায় তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক।

শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর আসামিদের কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের জন্য আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। এক্ষেত্রে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচারকরা কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

চোরাচালানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা প্রায় ১৫ মণ সোনা ও হীরা জব্দের ঘটনায় ওইসব মূল্যবান ধাতু কর নথিতে অপ্রদর্শিত ও গোপন রাখার দায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক ওই তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে গত ১২ আগস্ট রাজধানীর চার থানায় মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা। মামলাগুলোতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ধারা ২ (ঠ) এবং কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯-এর ধারা ১৫৬(৫) এর অভিযোগ আনা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দার পাঁচ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা যথাক্রমে এম আর জামান বাঁধন, বিজয় কুমার রায়, মো. শাহরিয়ার মাহমুদ, মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং মো. আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেন।

এর মধ্যে গুলশান থানায় দুটি (মামলা নম্বর ১৫ ও ১৬), ধানমন্ডি থানায় একটি (মামলা নম্বর ১০), রমনা থানায় একটি (মামলা নম্বর  ২৭) এবং উত্তরা থানায় একটি (মামলা নম্বর ১৭) ফৌজদারি মামলা করা হয়।

ওই মামলাগুলোতে গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের জামিন পান আসামিরা। পরে নিম্ন আদালতে তারা জামিননামাও দাখিল করেন। হাইকোর্টের জামিনের মেয়াদ শেষে হলেও নিম্ন আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর তিন মামলায় তাদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

প্রসঙ্গত, আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে স্বর্ণালংকার মজুদের অভিযোগে কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ অনুযায়ী কাস্টম হাউস ঢাকায় আরও পাঁচটি কাস্টমস মামলা বিচারাধীন।

উল্লেখ্য, বনানীর আলোচিত দি রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীতে ধর্ষণ করে আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার সহযোগিরা। ওই ঘটনার পর রাজধানীতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুম থেকে প্রায় ১৫ মণ সোনা ও হীরার অলংকার জব্দ করার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়।