- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

উখিয়ায় শরণার্থী ক্যাম্পে উন্নয়নকাজে অনিয়মের অভিযোগ

3
কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য উখিয়া-টেকনাফে স্থাপিত ১২টি অস্থায়ী ক্যাম্পে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাক পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য যে সমস্ত শৌচাগার স্থাপন করেছে, তার সবগুলোই নিম্নমানের বলে অভিযোগ উঠেছে। ওসব নিম্নমানের শৌচাগার থেকে নির্গত দুর্গন্ধে শরণার্থী ও স্থানীয় লোকজন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন।
এ নিয়ে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ করেছেন।
উখিয়া উপজেলার থাইংখালী তাজনিমারখোলা এলাকার বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ব্র্যাক ৬ ফুট গর্ত করে এক ফুট প্রস্থের একটি রিং দিয়ে তড়িগড়ি করে শৌচাগার স্থাপন করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী আয়াতুল্লাহ (৩৫), এনায়েতুল্লাহ (৪০) আজিজুল্লাহ (৩২) প্রমুখ রোহিঙ্গা শরণার্থী জানান, ব্র্যাক-নির্মিত শৌচাগারের দুর্গন্ধে ক্যাম্প এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
তারা জানান, এসব শৌচাগারের কাছাকাছি যে সমস্ত টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে তার গভীরতা ৩৫ থেকে ৪০ ফুট। টিউবওয়েল কম হওয়ার কারণে শৌচাগারের সাথে টিউবওয়েলের পানি সংযুক্ত হয়ে খাবার পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। ফলে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শতশত নারী-পুরুষ-শিশু। রোহিঙ্গা শরণার্থী অলি উল্লাহ (৩৯) তার তিন শিশুসহ ক্যাম্পে পাঁচ শতাধিক শিশুর পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার নেপথ্যে দায়সারাভাবে বসানো শৌচাগারগুলোকে দায়ী করছেন।
শৌচাগার নির্মাণকাজে কর্মরত কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ব্র্যাক কর্মকর্তার পরিচিতজনদের শৌচাগার ও টিউবওয়েল বসানোর কাজ দেয়া হয়েছে। যে কারণে ব্র্যাকের বসানো শৌচাগারগুলো এখন রোহিঙ্গাদের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় ঠিকাদার জসিম উদ্দিন জানান, ব্র্যাকের সমস্ত উন্নয়নকাজ প্রথম দিকে ব্র্যাক কর্মকর্তাদের পছন্দের লোকজনকে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে যে সমস্ত শৌচাগার ও টিউবওয়েল বসানোর কাজ চলছে তা সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে ঢাকা অফিস, তাও আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ঠিকাদার জানান, তাদের চাহিদামতো বিভিন্ন হারে কমিশন নিয়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ দেয়া হচ্ছে।
থাইংখালী তাজনিমারখোলা ক্যাম্পে দায়িত্বরত ব্র্যাকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আলী আজম জানান, প্রথম দিকে ছয় ফুট গর্ত করে একটি রিং ও একটি স্ল্যাপ দিয়ে যে সমস্ত শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছিলো সেগুলোর পুনঃসংস্কার চলছে। তার ক্যাম্পে প্রায় দেড় কোটি টাকার কাজ হয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, উন্নয়নের নামে ব্র্যাক কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকা লুটপাট করেছে। তাদের নির্মিত শৌচাগার ও টিউবওয়েলের পানি খেয়ে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামবাসীও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য ১২টি রোহিঙ্গা অস্থায়ী ক্যাম্পে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দায়িত্বে নিয়োজিত ব্র্যাকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার খালেদ মুরশেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আরেক কর্মকর্তা মাহাবুবের মুঠোফোনের নাম্বার দেন। তার নাম্বারের যোগাযোগ করা হলে তিনি আরো একটি নাম্বার দেন। ওই নাম্বারে ব্র্যাকের রোহিঙ্গা মানবিক সংকট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচীর প্রধান ইফাত নেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান বলেন, পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এরপর ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের ডেকে এনে তাদের নির্মিত অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার সংস্কার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।