কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রায় ৮ হাজারের অধিক নলকূল স্থাপন করেছে। তড়িগড়ি করে বসানো নলকূপগুলো মানসম্মত না হওয়ায় অধিকাংশ টিউবওয়েল অকেজো হয়ে গেছে। ফলে দেখা দিয়েছে খাবার পানি সংকট। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এনজিও গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু করলেও তা দীর্ঘসূত্রাতার কারণে খাবার পানি নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইকবাল হোসেনের সাথে কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি টিউবওয়েল অকেজো ও টিউবওয়েলের মাথা চুরি হয়ে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পানির স্তর গভীরে নেমে যাওয়ায় শতকারা ১০ভাগ টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা জানান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক নির্মিত সবকটি টিউবওয়েল এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। কুতুপালং নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প সেক্রেটারী হোসেন আহমদ অভিযোগ করে জানান, সরকারি ভাবে যেসব টিউবওয়েল বসানো হয়েছে, ওই সব টিউবওয়েল ৩০মিটার পর্যন্ত গভীরে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ১০-১৫ মিটার পাইপ দিয়ে দায়সারা ভাবে টিউবওয়েল বসানোর কাজ শেষ করেছে। গভীরতা কম হওয়ার কারণে ৪-৫ দিন যেতে না যেতেই টিউবওয়েল গুলো অকেজো হয়ে পড়ে। সে আরো জানান, এসব টিউবওয়েল গুলো সংস্কার করে দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে অনুনয়,বিনয় করা হলেও তিনি গুরুত্ব দেননি। যার ফলে অকেজো টিউবওয়েলের মাথা গুলো রাতের আধারে কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে কুতুপালং নতুন ক্যাম্পের লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, গুলশান পাহাড়, মদিনা পাহাড় এলাকা ঘুরে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের এলাকায় যেসব টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে সব গুলো টিউবওয়েল পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। মধূরছড়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা গৃহবধূ হালিমা খাতুন (৩৫) জানান, পানির অভাবে তারা রান্নাবান্না, কাপড় ধোয়া-মাঝার কাজ করতে পাচ্ছে না। খাবার পানি আনতে হচ্ছে এক কিলোমিটার দুর থেকে। একই ক্যাম্পের আরেক মহিলা নছিমা খাতুন (৩৯) জানান, তাদের টিউবওয়েল গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে পাশ্ববর্তী গ্রামের বাড়ি-ঘর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাও আবার স্থানীয় পরিবারের সদস্যদের নানান ধরনের খোঁচা মারা কথাবার্তা শুনতে হচ্ছে। এভাবে শতশত মহিলার খাবার পানি সংকটের কারণে তাদের দুঃখ, দুর্দশার চিত্র তুলে ধরলেন। কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি হামিদ হোসেন মাঝি জানান, ঢালাওভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগে যেসব ঠিকাদারী সংস্থা টিউবওয়েল বসানো কাজ পেয়েছে তারা মূলত চুক্তিভুক্তিত কাজ না করে টিউবওয়েল স্থাপনের নামে টাকা লুটপাট করেছে। যে কারণে বর্তমানে প্রায় টিউবওয়েল অকেজো হয়েছে পড়েছে। দেখা দিয়ে খাবার পানি সংকট। সে জানায়, সামনে সুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট আরো তীব্রতর হতে পারে বলে আশংখা করা হচ্ছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন উখিয়া-টেকনাফের ১২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২ হাজার ১৯৩টি টিউবওয়েল স্থাপনের কথা স্বীকার করেছে। কতটি টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়েছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি জানান, ১০শতাংশ টিউবওয়েল অকেজো অবস্থায় রয়েছে। তবে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থাপন করা ৫০শতাংশ টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা।