Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ সমাবেশ

উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের বিক্ষোভ সমাবেশ

received_1894810590814605
কায়সার হামিদ মানিক ,উখিয়া : কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিক্ষোভ করেছে রোহিঙ্গারা। শনিবার রোহিঙ্গা সংকটের এক বছর পূর্ণ হওয়ায় নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবিতে এই বিক্ষোভ করেন। শনিবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী ও মধুরছড়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে এক সঙ্গে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রোহিঙ্গারা। এতে রোহিঙ্গা নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বিক্ষোভে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন,‘মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী মগরা আমাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমাদের প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে হয়েছে। কিন্তু, এক বছর পার হয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক মহল এখনও পর্যন্ত কোনও ধরনের সুরাহা করতে পারেনি। আমরা আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই। এজন্য আমাদের নিরাপদ পরিবেশ, নাগরিকত্ব ও একটি রাষ্ট্রের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
উখিয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় একটি অংশের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন,‘রোহিঙ্গা নির্যাতনের এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু, আমাদের ভাগ্যের কোনও উন্নয়ন হয়নি। এজন্য আন্তর্জাতিক মহলকে নাড়া দিতে আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশ।’
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন,‘সকাল থেকে আমরা আমাদের ব্লকে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছি। এতে করে অন্তত আমাদের মনে একটু হলেও শান্তি আসবে। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই। আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই।’
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লালু মাঝি বলেন,‘আমাদের এই বিক্ষোভ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। আমরা আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এই বিক্ষোভ সমাবেশ করছি। আজ (গতকাল) এক বছর পার হলেও আমরা সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সন্দিহান। আমরা বিচার চাই, মিয়ানমারের শাস্তি চাই।’
উখিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল খায়ের এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,‘ সকালে হঠাৎ করেই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে রাস্তায় নামার চেষ্টা করে। আমরা বাধা দিলে তারা ক্যাম্পের ভেতরেই শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোপ সমাবেশ করার অনুরোধ জানায়। পরে উখিয়া ও বালুখালীর বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা তাদের কর্মসূচি পালন করে। রোহিঙ্গারা প্রতিবাদ সরূপ প্রায় তিন ঘণ্টা তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এতে কোনও ধরণের অপ্রীতিকার ঘটনা ঘটেনি।’
১৯৮০ সালে আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার পর মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর দমন নিপীড়ন শুরু করে । এর পর নানা অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নেমে আসে বর্বর নির্যাতন। গত ১৯৭৮ ও ১৯৯২ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসা শুরু করে। মিয়নমার সেনাবহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর এবং ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করে।
মুলত ২০১৭’র আগস্টের পর থেকে ধাপে ধাপে সামরিক প্রচারণা চালিয়ে সেখানকার বাসিন্দাদের রোহিঙ্গাবিদ্বেষী করে তোলা হয়। ফলে নিপিড়নের মুখে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়। কিন্তু এবার প্রায় ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। নতুন পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংখ্যা এখন ১১ লাখ ১৬ হাজার ৪১৭জন। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রায় তিন লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!