সুসন্তান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। এই শ্রেষ্ঠ উপহার যথাযথ সংরক্ষণ মানবজাতির জন্য আমানতস্বরূপ। সুসন্তান পরকালীন জীবনে আমাদের জন্য মুক্তির পাথেয়। পবিত্র কুরআনে সন্তানকে মানবজীবনের সৌন্দর্য ও রূপ বলা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘ সম্পদ ও সন্তানাদি দুনিয়ায় জীবনের সৌন্দর্য ‘ (সূরা কাহাফ, আয়াতঃ-৪৩)। অন্যত্রে ইরশাদ হয়,’ জেনে রাখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান -সন্ততি তো এক পরীক্ষা এবং আল্লাহরই নিকট এর জন্য মহাপুরস্কার রয়েছে ‘। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন,’ মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী সকল সাওয়াবের ধারা বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তিনটি সাওয়াবের ধারা বন্ধ হয় না। তা হলো- (১) সদকায়ে জারিয়া,(২) উপকারী জ্ঞান, (৩) সুসন্তান ‘(মুসলিম)। কাজেই সন্তানদের প্রতি যথাযথ যত্নশীল, তাদেরকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান, মাতাপিতার প্রতি বাধ্য হওয়ার সুফল এবং অবাধ্য হওয়ার কুফল সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান প্রত্যেক মাতা- পিতার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, আজ আধুনিক বিশ্ব ও শিক্ষার সমন্বয় করতে গিয়ে সন্তাদেরকে ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। যার প্রতিচ্ছবি আমরা শুনছি,দেখছি ও বাস্তবজীবনে উপলব্ধি করছি আবার অনেকেই শিকার হচ্ছি। এই নিষ্ঠুর পরিস্থিতির জন্য বেশিরভাগই মাতা-পিতারাই দায়ী। কারণ, ছোটবেলা থেকে যদি ধর্মীয় আচার-আচরণ ও মূল্যবোধের শিক্ষা প্রদান এবং চর্চা করা হয় তাহলে কোনোদিনই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে না। ছোটরা মাতা-পিতার সবকিছু অনুসরণ-অনুকরণ করে। তাই মাতা-পিতাকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। ঘরে আপনার বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি যত্নশীল হতে হবে, তাঁদের প্রতি অবহেলা করা যাবেনা। কথায় আছে, ‘ বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার যত্ন নিন, বার্ধক্যে আপনিও যত্ন থাকবেন’।
মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও যত্নশীল হওয়া প্রত্যেক সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মানুষ যখন বৃদ্ধ হয় তখন ছোট সন্তান সমতুল্য হয়ে যায়। কাজেই বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার আচার-আচরণে সন্তানরা যাতে ‘উফ’ শব্দ প্রকাশ বা ধমক না দেয় কিংবা সন্তানের আচার-আচরণে বয়োবৃদ্ধ মা-বাবারা ‘উফ’ শব্দ প্রকাশ না করে এব্যাপারে মহান আল্লাহ তা’ আলা পবিত্র কুরআনে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। মা-বাবার সুস্থতা কামনায় মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া কর যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন'(সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ- ২৪)।
গতো ২৭/১২/২০২২ইং তারিখে দৈনিক আজাদী পত্রিকায় “৪০ ঘন্টা পর দাফন করা হলো সেই বাবার লাশ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যা খুবই হৃদয়বিদারক। মানুষের নীতি-নৈতিকতার অধঃপতন কতটুকু পর্যায়ে পৌঁছলে এরূপ ঘটনা ঘটে। মানুষ টাকা ও স্বার্থের কাছে এভাবে কেমনে হারিয়ে যায়। বলছিলাম সেই হতভাগ্য পিতা মনির আহমদের (৬৫) সন্তানদের কথা। মনির আহমদ চট্টগ্রামের পদ্মা অয়েল কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা। সে দীর্ঘদিন ধরে পাকস্থলী ক্যান্সারে ভুগছিল। সে মারা যাওয়ার পর অফিস থেকে পাওয়া ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে-মেয়েদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়। যার ফলে বাড়ির আঙ্গিনার পাশে মনির আহমদের নিথর দেহ ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে ৪০ ঘন্টা পড়ে ছিল। অবশেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপ ও সমঝোতার পর তার লাশ দাফন করা হয়। এই হলো আমাদের সমাজে বাস্তব চিত্র। এরূপ হৃদয়বিদারক অহরহ ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে।
অতএব, সন্তানদেরকে সঠিক ধর্মীয় আচার-আচরণ, মূল্যবোধ শিক্ষা প্রদান ও চর্চা এবং যথাযথ যত্নবান ও পরিচর্যার মাধ্যমে আলোকিত, আদর্শবান ও নীতিবান সন্তান গড়ে তোলা সম্ভব। যার ফলে একটি আদর্শ সমাজ ও জাতি বিনির্মান হবে, সর্বোপরি সোনার বাংলাদেশের বাস্তব চিত্র প্রতিফলিত হবে।
লেখক: আবু বকর মুহাম্মদ হানযালা, শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।