ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | আরসা প্রধান আতাউল্লাহর ভাই কক্সবাজারে গ্রেপ্তার, দাবি পুলিশের

আরসা প্রধান আতাউল্লাহর ভাই কক্সবাজারে গ্রেপ্তার, দাবি পুলিশের

আরসা নেতা মোঃ শাহ আলী

নিউজ ডেক্স : কক্সবাজারে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বা এপিবিএন বলছে, তারা আরাকান স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র প্রধান মোহাম্মদ আতাউল্লাহর ভাইকে উখিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে। একটি অপহরণের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে রোববার ভোররাতে মোহাম্মদ শাহ আলী নামে এই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানাচ্ছে পুলিশ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা এপিবিএন-এর এসপি নাইমুল হক বলেন, “একজন রোহিঙ্গা নাগরিক অপহৃত হয়েছিলেন গতকাল (শনিবার), তার তদন্ত করতে গিয়ে ড্রোনের মাধ্যমে অপহৃত ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত হয়। এরপর সে অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে ভোররাতে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা।”

“গ্রেপ্তার ব্যক্তি আরসার কমান্ডার মোহাম্মদ আতাউল্লাহর আপন ভাই। এবং এই ব্যক্তি অপহরণ সহ নানারকম অপরাধের সাথে জড়িত একটি দলের নেতা।” আটকের সময় একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি দেশি অস্ত্র, এক লাখ ১০ হাজার টাকা এবং এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন মি. হক।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি আরসা প্রধানের ভাই সেটি কিভাবে নিশ্চিত হলো পুলিশ, জানতে চাইলে মি. হক বলেন, “আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, সেসময় সে নিজেই স্বীকার করেছে যে আতাউল্লাহ তার আপন ভাই। তাছাড়া আতাউল্লাহর সাথে তার মুখের (চেহারার) সাদৃশ্য অনেক। এরপর বাকি তদন্ত পুলিশ করবে।”

বিকেলে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে উখিয়া থানার কাছে হস্তান্তর করেছে এপিবিএন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং মাদক আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পুলিশ বলছে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পক্ষের রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার সঙ্গে শাহ আলীর সম্পৃক্ততা আছে কি না, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প
ছবির ক্যাপশান,রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

আরসা সম্পর্কে কী জানা যায়?

২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ত্রিশটি চৌকিতে হামলা চালানোর জন্য দেশটির কর্তৃপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি বা আরসাকে দায়ী করেছিল।

সেই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে, আর সেই হত্যা, ধর্ষণ এবং নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় দশ লাখের মত রোহিঙ্গা শরণার্থী। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে প্রথম এই সংগঠনটিরই নাম শোনা গিয়েছিল।

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি আগে ইংরেজীতে ‘ফেইথ মুভমেন্ট’ নামে তাদের তৎপরতা চালাতো। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত ছিল ‘হারাকাহ আল ইয়াকিন’ নামে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা-কে একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেছে।

বিবিসির জোনাথন হেডের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের অগাস্টে চালানো হামলা ছিল মূলত বিশ্ববাসীর নজর কাড়ার চেষ্টা। এই সংগঠনটি রোহিঙ্গা মুসলমানদের অধিকার আদায়ে কাজ করে, এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের গেরিলা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

মিয়ানমার বলছে, এই গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছে রোহিঙ্গা জিহাদীরা, যারা বিদেশে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তবে সংগঠনটি কত বড়, এদের নেটওয়ার্ক কতটা বিস্তৃত, তার কোন পরিস্কার ধারণা তাদের কাছেও নেই। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর তৎপরতার অভিযোগ শোনা যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরসাসহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং চরমপন্থি সশস্ত্র গ্রুপ ক্রিয়াশীল রয়েছে, যারা মূলত অপহরণসহ নানা ধরণের অপরাধ তৎপরতায় যুক্ত।

বলা হয়ে থাকে রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তায় এখন বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয় আরসাকে। আরাকানে যারা এই সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত, তাদের আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ আছে বলে মনে করা হয়। স্থানীয় রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই সংগঠনটির প্রতি সমর্থন এবং সহানুভূতি আছে।

তবে এই আরসার বিরুদ্ধেও নানারকম সহিংসতা চালানোর অভিযোগ আছে। ২০১৮ সালে আরসার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ তোলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, আরসা রাখাইনে একটি অথবা দু’টি গণহত্যা চালিয়ে শিশুসহ ৯৯জন হিন্দুকে হত্যা করেছে। তবে আরসা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মোহাম্মদ আতাউল্লাহ কে?

মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের ধারণা, আরসার নেতৃত্বে রয়েছেন ‘আতাউল্লাহ’ নামে একজন রোহিঙ্গা, যার জন্ম করাচীতে, বেড়ে উঠেছেন সৌদি আরবে। পুলিশ কর্মকর্তা মি. হক বলেছেন, আরসা কমান্ডার মোহাম্মদ আতাউল্লাহ মিয়ানমারে অবস্থান করছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের তৎপরতার সাথে মোহাম্ম শাহ আলীর কোন সংযোগ আছে কিনা—সেটি তদন্তসাপেক্ষ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’ তাদের এক রিপোর্টে বলছে, আরসা মূলত গড়ে উঠেছে সৌদি আরবে চলে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দ্বারা। মক্কায় থাকে এমন বিশ জন নেতৃস্থানীয় রোহিঙ্গা এই সংগঠনটি গড়ে তোলে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং ভারতে এদের যোগাযোগ রয়েছে।

সংগঠনটির নেতা আতাউল্লাহ ‘আবু আমর জুনুনি’ নামেও পরিচিত। আতাউল্লাহর বাবা রাখাইন থেকে পাকিস্তানের করাচীতে চলে যান। সেখানেই আতাউল্লাহর জন্ম। তিনি বেড়ে উঠেছেন মক্কায়। সেখানে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন।

ইউটিউবে তার একটি ভিডিও থেকে ধারণা করা হয়, রাখাইনের রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে সেটি এবং আরবী, এই দুটি ভাষাই তিনি অনর্গল বলতে পারেন। ২০১২ সালে আতাউল্লাহ সৌদি আরব থেকে অদৃশ্য হয়ে যান। এরপর আরাকানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তার নাম শোনা যায়। -বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!