ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | অস্ত্র জমা দেননি মোস্তাফিজ-নদভীসহ আ.লীগের প্রভাবশালী নেতারা

অস্ত্র জমা দেননি মোস্তাফিজ-নদভীসহ আ.লীগের প্রভাবশালী নেতারা

নিউজ ডেক্স: চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। নানা সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে হামলা এবং আক্রমণাত্মক বক্তব্যের সমালোচিত ছিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। দলীয় বিবেচনায় প্রভাবশালী এই সংসদ সদস্য পেয়েছিলেন দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স। এর মধ্যে একটি ১ নলা বন্দুক এবং আরেকটি পিস্তল। সরকারের নির্দেশনা ছিল লাইসেন্স করা এই বন্দুক ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দুটি জমা দেননি তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মোস্তাফিজ আগেও লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে জনসাধারণের মাঝে ভীতি ছড়িয়েছিলেন। বৈধ অস্ত্র বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করেছেন অবৈধ কাজে। বর্তমানে যেকোনো সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে এসব অস্ত্র। এ কারণে ভয়ের মধ্যে রয়েছেন বাঁশখালীর জনগণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দুটি উদ্ধার এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যৌথবাহিনী তার এই অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে।

মোস্তাফিজের মতো আরেক দাপুটে সংসদ সদস্য ছিলেন আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী। চট্টগ্রাম-১৫ আসনের এই সংসদ সদস্যের নামেও ইস্যু রয়েছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে একটি শটগান ও আরেকটি পিস্তল। একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন নদভী। নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর জামায়াতের ওপরই সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন চালিয়েছেন তিনি। অতীতে কোনো সময় আইনের তোয়াক্কা করেননি নদভী। সরকারের পক্ষ থেকে লাইসেন্স বাতিল করে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানেননি তিনি।

 বন্যার্তদের সহায়তাসহ নানা সময় মানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ফারাজ করিম চৌধুরী। তিনি ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে। নিরাপত্তা কথা বলে অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন আলোচিত ফারাজ। তবে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর যথাসময়ে রাউজান থানায় অস্ত্র জমা দেননি তিনিও।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে ফারাজ করিম চৌধুরীর অস্ত্র থানায় জমা দেওয়া হয়নি।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজ, ফারাজ ও নদভী ছাড়াও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দেননি। এই তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনিও। তার নামে লাইসেন্স করা একটি পিস্তল থানায় জমা হয়নি। বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীও তার নামে ইস্যু করা ১ নলা বন্দুক জমা দেননি। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা আ ম ম মিনহাজুর রহমানও তার নামে ইস্যু করা শটগান জমা দেননি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির প্রভাবশালী নেতারা। বন্ধ রয়েছে তাদের ব্যবহৃত সেলফোনও। তাই এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) বিভিন্ন থানার অনুকূলে মোট ৪৫৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন থানায় জমা হয়েছে ৩৬১টি। বাকি ৯৩টি অস্ত্রের হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন থানার অনুকূলে ৩৮৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। এর মধ্যে ৩৩৫টি বিভিন্ন থানায় জমা হয়েছে। বাকি ৫৩টি অস্ত্রের হদিস মেলেনি।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন ও সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, বেশিরভাগ অস্ত্র নির্দিষ্ট সময়ে জমা হয়েছে। কিছু কিছু অস্ত্র যে থানার অনুকূলে ইস্যু হয়েছিল, সেখানে জমা হয়নি। অন্যান্য থানায় জমা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনও আমরা সংগ্রহ করছি। আর জমা না হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইন প্রয়োগ নিয়ে জটিলতায় পুলিশ

গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিধি অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বরের পর থেকে লাইসেন্স করা যেসব অস্ত্র থানায় জমা হয়নি সেগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এখন নির্ধারিত সময়ের পরও কিছু লোক থানায় অস্ত্র জমা দিতে যাচ্ছেন। যারা যুক্তি হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন তারা যথাসময়ে খবর পাননি। আবার কেউ কেউ দেশের বাইরে থাকার অজুহাত দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ নিয়ে জটিলতায় পড়ছে পুলিশ।

মোস্তাফিজ, ফারাজ ও নদভী ছাড়াও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দেননি। এই তালিকায় রয়েছেন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনিও। তার নামে লাইসেন্স করা একটি পিস্তল থানায় জমা হয়নি। বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীও তার নামে ইস্যু করা ১ নলা বন্দুক জমা দেননি। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা আ ম ম মিনহাজুর রহমানও তার নামে ইস্যু করা শটগান জমা দেননি

মাঠ পর্যায়ে কাজ করা পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ৩ সেপ্টেম্বরের পরে যেসব অস্ত্র জমা হবে তাদের সবার বিরুদ্ধে কী মামলা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা আসেনি মন্ত্রণালয় থেকে। এ ক্ষেত্রে কৌশলে আইনের প্রয়োগ করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। নির্ধারিত সময়ের পর আসা কারও যদি খারাপ উদ্দেশ্য না থাকে তাহলে আপাতত অস্ত্রগুলো জমা নিয়ে নিচ্ছেন। পরবর্তীতে যদি মন্ত্রণালয় থেকে ভিন্ন নির্দেশনা আসে তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আবার কোথাও অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করা লাগলে সেক্ষেত্রে মামলা রুজু করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

লাইসেন্স বাতিলের পর অবৈধ হয়ে যাওয়া অস্ত্রের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা হতে পারে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল গালিব বলেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী বিভাগ তথা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দিষ্ট আদেশ দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে পুলিশের আইন প্রয়োগ করতে সহজ হত। কিন্তু এখন যেহেতু নির্দেশনা আসেনি, সেহেতু পুলিশ অভিযান চালিয়ে লাইসেন্স বাতিলের পর অবৈধ হয়ে যাওয়া অস্ত্র উদ্ধার করলে অবশ্যই মামলা করতে হবে। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় এসব মামলা রুজু হবে। তবে কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের পরে থানায় এসে অস্ত্র জমা দেয়, সেক্ষেত্রে পুলিশ একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনসহ (ফরোয়ার্ডিং) আদালতে পাঠাতে পারে এবং আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। -ঢাকা পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!