- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

অর্ধেক দামে ত্রাণসামগ্রী বিক্রি করছে রোহিঙ্গারা

Coxs-Pic1-14-10-17-800x486

নিউজ ডেক্স : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা এসব রোহিঙ্গা কেউ হারিয়েছেন বাবাকে, কেউ বা মাকে হারিয়েছেন। কেউ কেউ নিজের সন্তান হারিয়েছেন। আর অনেকেই স্বামীকে হারিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। মিয়ানমারে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর। এমন বিপর্যয়ে মানবিকতায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। মানবিকতার ধারাবাহিকতায় এসব রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে দেয়া হয়েছে ত্রাণ। এখনো ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত বিতরণে এখন উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘরে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। মজুদ থাকার পরও

এখনো ত্রাণের জন্য ছুটছে রোহিঙ্গারা। চাহিদার অধিক ত্রাণসামগ্রী এখন স্থানীয় মানুষের কাছে ও বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। স্বল্পমূল্যে ত্রাণগুলো কিনতে অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্যাম্পে। সবচেয়ে বেশি ত্রাণ মজুদ রয়েছে উখিয়ার বালুখালী, থাইংখালী, জামতলীর বাঘঘোনা, তাজনিমারঘোনা ও হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। প্রতিটি ঝুপড়ি ঘরে এখন ত্রাণে ভরপর। গত কয়েকদিন ক্যাম্পগুলো ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টাকার প্রয়োজনে দেশি–বিদেশি সাহায্য সংস্থা, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেয়া ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছে রোহিঙ্গারা। বাজার মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে এসব ত্রাণ বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ ত্রাণসামগ্রী স্বল্প দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ত্রাণ কিনতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সেখানে ত্রাণ কিনতে সিন্ডিকেট সদস্যদের হুড়োহুড়ি করতেও দেখা গেছে।

গতকাল শনিবার সকাল ১১ টার দিকে কুতুপালং ১ নং ত্রাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, আবু সিদ্দিক নামের এক রোহিঙ্গা ১টি চেয়ার, ১টি পাটি ও ১টি বালতি পেয়েছেন। ত্রাণ কেন্দ্র থেকে বের হয়ে সেসব জিনিস একব্যক্তির কাছে মাত্র ২০০ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। ত্রাণ কেন বিক্রি করে দিয়েছেন জানতে চাইলে আবু সিদ্দিক বলেন– ঘরে অনেক জিনিসপত্র রয়েছে। এসব (চেয়ার, পাটি ও বালতি) জিনিসও রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশি টাকা নাই। টাকার জন্য এসব বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। মোজাফ্ফর নামে পুরাতন এক রোহিঙ্গা নাগরিক এসব ত্রাণ কিনে নিয়েছেন। এই তিনটি জিনিসের বাজারমূল্য প্রায় ৬০০ টাকা বলে জানা গেছে।

মিয়ানমারের মেরুল্লাহ গ্রাম থেকে আসা বৃদ্ধ আবু শামার সাথে দেখা হয় কুতুপালং বাজারে। তার সঙ্গে রয়েছে একটি বস্তা। বস্তার ভিতরে রয়েছে চাল, ডাল, মরিচ, আলু, পেঁয়াজ ও তেল। এসবের বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক ১ হাজার চারশ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু তিনি বাজারে এসে এসব ত্রাণ বিক্রি করে দিয়েছেন মাত্র সাড়ে ৩ শত টাকায়।

জানতে চাইলে আবু শামা বলেন, আমার বাড়িতে অনেক ত্রাণ আছে। এখন টাকার প্রয়োজন তাই ত্রাণ বিক্রি করে দিচ্ছি। এত কম দামে বিক্রি করছেন কেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আবু শামা বলেন, কি করব, টাকার প্রয়োজন।

সরেজমিনে কুতুপালং, বালুখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে– বাজারে এক কেজি চালের দাম ৫৫ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। রোহিঙ্গারা ত্রাণের চাল বিক্রি করছে মাত্র ৩২ টাকা কেজি দরে। অনেক সময় ২৫ থেকে ৩০ টাকায়ও বিক্রি করছে। বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি ৬০ টাকা কেজি দরে চিনি কিনে রোহিঙ্গাদের মাঝে দিচ্ছেন। আর রোহিঙ্গারা সেই চিনি বিক্রি করছে মাত্র ৩০ টাকায়। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ডাল ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেগুলো রোহিঙ্গারা বিক্রি করছে ৭০ টাকায়। ১২০ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল মাত্র ৬০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করছে রোহিঙ্গারা। এছাড়া ৫০০ গ্রাম ডানো দুধ বিক্রি করছে ১০০ টাকায়। চিড়া বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর রোহিঙ্গারা বিক্রি করছে ৩০ টাকা কেজি দরে। পুরাতন রোহিঙ্গাদের একটি সিন্ডিকেট কৌশলে নতুন রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে অল্পদামে এসব ত্রাণ কিনে নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

কুতুপালং বাজারে চাল বিক্রি করতে আসা রোহিঙ্গা আবদুল মোনাফ বলেন, ‘গত ২০ দিনে বাসায় ৫ বস্তা চাল জমা হয়েছে। এত চাল আমাদের লাগবে না। প্রতিদিন চাল পাচ্ছি। তাই টাকার প্রয়োজনে দু’বস্তা চাল প্রতি কেজি ৩২ টাকা দরে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন এসব টাকা নিয়ে অন্য জিনিস কিনবো।’ তিনি বলেন, ‘কয়েকজন ব্যক্তি খালী বস্তা নিয়ে নিয়মিত ক্যাম্পে যান ত্রাণ কিনতে। তারা বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ত্রাণগুলো কিনে নিয়ে আসেন।’ যারা ত্রাণ কিনেন তারা স্থানীয় বাজারের লোকজন বলে জানান তিনি। এছাড়া তাদের দোকানে গিয়ে ত্রাণগুলো বিক্রি করতেও বলেন তারা। তাদের ত্রাণ বেশি হয়েছে; তারা বিভিন্নভাবে বাজারে গিয়ে ত্রাণগুলো বিক্রি করে অন্য জিনিস কিনছেন। -পূর্বকোণ