- Lohagaranews24 - http://lohagaranews24.com -

অভিজিৎ হত্যা মামলায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিউজ ডেক্স : বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার মামলায় সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়াসহ পাঁচ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড এবং উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

আজ মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান সাড়া ফেলা এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। বিডিনিউজ

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি কায়দায় হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তার স্ত্রী।

সেই ঘটনা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোড়ন সৃষ্টি করে।
পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তমনা ব্লগ সাইট পরিচালনা করতেন তিনি। জঙ্গিদের হুমকির মুখেও তিনি বইমেলায় অংশ নিতে দেশে এসেছিলেন।

রায়ে বলা হয়, “আসামিরা সাংগঠনিকভাবে অভিন্ন অভিপ্রায়ে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে। সেই কারণে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তিই প্রাপ্য।”

এ মামলায় অভিযুক্ত ছয় আসামির মধ্যে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস), আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

আর অপর আসামি উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবীকে রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত না থাকলেও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অভিজিৎ রায়কে ‘হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন’ বলে তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়।
আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরামকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার কার্যক্রম চলে। বাকি চার আসামি রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আইনজীবীরা জানান, ফারাবীকে রায়ের পর কিছুটা বিমর্ষ দেখালেও বাকি তিনজন রায়ের আগে ও পরে ছিল একই রকম ‘উৎফুল্ল ও উদ্ধত’। তাদের একজন দুই আঙুল তুলে ‘ভি’ চিহ্নও দেখান।

দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে জিয়া, সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিবকে প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার রায়েও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

অভিজিৎ হত্যা মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা খায়রুল ইসলাম লিটন ও মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার খান জাকির বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট।

রায়ের সময় অভিজিতের পরিবারের কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। অভিজিতের স্ত্রী বন্যা আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। আর অভিজিতের বাবা এ মামলার বাদী অধ্যাপক অজয় রায় বিচারের শেষ দেখে যেতে পারেননি।

ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় মন ভেঙে গিয়েছিল তার, সেই শোক সইতে না পেরে স্ত্রীও গত হয়েছিলেন বছরখানেক আগে। এ মামলার বিচার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রয়াত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক অজয় রায়। অভিজিতের ছোট ভাই অনুজিত রায় বলেছেন, রায়ের সময় উপস্থিত থাকতে চাইলেও অসুস্থতার কারণে তা পারেননি।

রায়ের পর টেলিফোনে তিনি বলেন, “আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট। তবে রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক। জিয়াসহ যারা পলাতক, যারা হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হোক। যদি গ্রেপ্তার করা না যায়, তাহলে আবার নতুন ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।”